আদভানিকে দেওয়া হচ্ছে ভারতরত্ন খেতাব

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে লালকৃষ্ণ আদভানিফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ দেওয়া হচ্ছে বিজেপির নবতিপর নেতা ও দেশের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানিকে। আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এ খবর জানান। মোদি বলেছেন, তিনি নিজেই আদভানিকে এ খবর জানিয়েছেন। তাঁকে অভিনন্দিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ মুহূর্ত তাঁর কাছে অত্যন্ত আবেগপূর্ণ।

মোদি বলেছেন, আজকের সময়ে আদভানি সবচেয়ে সম্মানীয় রাজনীতিক। দেশের অগ্রগতিতে তাঁর ভূমিকা অনন্য।

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির নির্মাণ আন্দোলনের নেতৃত্ব তিন দশক আগে আদভানিই দিয়েছিলেন। শুরু করেছিলেন রথযাত্রা। সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে মন্দির নির্মাণ ও তার উদ্বোধনের মাধ্যমে। এর পরেই আদভানিকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

লালকৃষ্ণ আদভানির বয়স এখন ৯৬। ১৯২৭ সালের ৮ নভেম্বর তাঁর জন্ম। বিজেপির কট্টরপন্থী নেতা হিসেবে তিনি পরিচিত। দলীয় মহলে তাঁকে ‘লৌহমানব’ বলে ডাকা হতো। সেই আদভানি ও তাঁর সমসাময়িক মুরলী মনোহর যোশি, যশবন্ত সিং, যশবন্ত সিনহার মতো রাজনীতিকদের নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সক্রিয় দলীয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেন। তাঁদের দলের ‘মার্গ দর্শক’ (পথপ্রদর্শক) করে দেন।

শুধু তা-ই নয়, গত ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের উদ্বোধন কিংবা তারও চার বছর আগে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট মন্দিরের ভূমি পূজা অনুষ্ঠানে আদভানিকে দেখা যায়নি। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ‘স্বাস্থ্যের কারণে’ তাঁকে উপস্থিত না থাকতেও বলা হয়েছিল। এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ থেকে বলা হয়েছিল, অন্য কেউ না চাইলেও তারা আদভানিকে অযোধ্যায় নিয়ে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি অযোধ্যায় যাননি।
ভারতীয় রাজনীতিতে, বিশেষ করে বিজেপিতে অটল বিহারি বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আদভানির নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হয়। আদভানির চেয়ে তিন বছরের বড় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীকে ২০১৫ সালে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়া হয়েছিল। তখন আদভানিকে ওই খেতাব দেওয়ার কথা ভাবা হয়নি।

গত ২৩ জানুয়ারি মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন’ খেতাব দেওয়া হয় বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কর্পুরী ঠাকুরকে, যিনি সমাজের অনগ্রসর মানুষজনের উন্নয়ন ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে গেছেন। বিহারের রাজনীতিতে বিজেপি বরাবর কর্পুরী ঠাকুরের রাজনীতির বিরোধিতা করেছে। রাজনৈতিক ধারণা, বিরোধী জোট থেকে জেডিইউ নেতা ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে বের করে আনাই ছিল কর্পুরী ঠাকুরকে সম্মান জানানোর লক্ষ্য। সেই সময়েও আদভানিকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার কথাটি মোদির বিবেচনায় আসেনি।

রামমন্দির নির্মাণে আদভানিকে ব্রাত্য রাখার বিষয়ে হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে। দলীয় মহলে অনেক আলোচনাও হচ্ছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ও সংঘ পরিবারের অন্যান্য সংগঠনের অভ্যন্তরে। লোকসভা ভোটের মুখে সেই আলোচনা ও সমালোচনা বন্ধেই আচমকা তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।

বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। সেই ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আদভানি। পরে আদালত জানিয়েছিলেন, মসজিদ ধূলিসাৎ করার সেই ঘটনা ঘটেছিল ‘স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষের কারণে’। সেটা কোনো ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত ছিল না।