তিস্তার পানি প্রত্যাহারে নতুন দুই খাল কাটছে পশ্চিমবঙ্গ

সংকট বাড়াবে বাংলাদেশের। নয়াদিল্লির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চাইবে ঢাকা।

তিস্তা ব্যারাজফাইল ছবি

তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ প্রায় এক হাজার একর পরিমাণ জমির মালিকানা পেয়েছে। গত শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জমির মালিকানা হস্তান্তর করেছে।

ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ–এর গত শনিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পদক্ষেপের আওতায় জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার এলাকার আরও অনেক কৃষিজমি সেচের আওতায় আসবে। তিস্তা প্রকল্পে নতুন খাল খননের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে ক্ষুব্ধ করবে। এতে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ কম পানি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুক্রবার জলপাইগুড়ির জেলা প্রশাসন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে সেচ বিভাগকে জমির মালিকানা হস্তান্তর করে। এ জমির মাধ্যমে তিস্তার পূর্ব তীরে দুটি খাল তৈরি করতে পারবে প্রশাসন। জলপাইগুড়ি জেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া আরেক নদী জলঢাকার পানিপ্রবাহও খালের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।

তিস্তায় নতুন খাল খননের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গতকাল রোববার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁরা গণমাধ্যমে খবরটি জেনেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে কূটনৈতিকপত্রের মাধ্যমে তিস্তায় সবশেষ কী হচ্ছে, তা ভারতের কাছে জানতে চাইবে বাংলাদেশ।

পশ্চিমবঙ্গ সেচ বিভাগের এক সূত্রের বরাতে টেলিগ্রাফ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা ও জলঢাকার পানি টানার জন্য কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল খনন করা হবে। আরেকটি খালের দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার। এটি তিস্তার বাঁ পাশের তীরবর্তী এলাকায় খনন করা হবে। খাল খনন করা হলে প্রায় এক লাখ কৃষক সেচসুবিধার আওতায় আসবেন। ব্যারাজটি জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় অবস্থিত।

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘খাল খননের জন্য জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন আমাদের কাছে এক হাজার একর জমি হস্তান্তর করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার একে জাতীয় প্রকল্প (২০০৯ সালে) ঘোষণা করলেও তহবিল দিচ্ছে না। তবে তহবিল না পেলেও আমরা ধাপে ধাপে কাজ (খালের নেটওয়ার্ক তৈরি) শেষ করার চেষ্টা করব।’

টেলিগ্রাফ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ বছর পর তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে এ খাল খননের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে ক্ষুব্ধ করবে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি এখনো সই হয়নি।

ভারতের এক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, তিস্তা প্রকল্পের আওতায় নতুন খাল খননের মধ্য দিয়ে মমতা প্রমাণ করতে চাইছেন উত্তরবঙ্গের জন্য তিস্তা নদীর পানি প্রয়োজন।

শিলিগুড়ির নর্থ বেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘এখন তাঁর (মমতা) সরকার সেচ নেটওয়ার্কের আওতা বাড়াচ্ছে। এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে নতুন খালের মধ্য দিয়ে তিস্তা নদী থেকে আরও বেশি পানি সরিয়ে নেওয়া হবে। এর মানে, শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ আরও কম পানি পাবে।’