ভারতের ৪ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে কোমর কষে নামার বার্তা দিলেন সোনিয়া
চলতি বছরের শেষে ভারতের চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা দখলের প্রস্তুতি শুরু করে দিচ্ছে কংগ্রেস। আজ বুধবার সকালে কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় সদস্যদের একজোট হয়ে কোমর কষে নামার বার্তা দিলেন সোনিয়া গান্ধী। তিনি বলেন, লোকসভা ভোটে সাফল্য এসেছে ঠিকই, কিন্তু সে জন্য তুষ্ট হলে চলবে না। অতিমাত্রায় আস্থাবান হওয়াও নয়। জয়ের লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে একজোট হয়ে ঝাঁপাতে হবে।
কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপারসন তাঁর ভাষণে বলেন, ‘কয়েক মাসের মধ্যেই চার রাজ্যের ভোট। লোকসভা ভোটের সাফল্য ধরে রাখতে পারলে আমাদের জয় অবশ্যম্ভাবী। লোকসভার ভোট আমাদের একটা গতি দিয়েছে। মানুষের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। সেই গতি ধরে রাখতে হবে। সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় নামতে হবে।’
সোনিয়া বলেন, ‘লোকসভা ভোটের ট্রেন্ড যদি আমরা ধরে রাখতে পারি, আমরা যদি ভালো ফল করতে পারি, তা হলে নিশ্চিত যে জাতীয় রাজনীতির গতি–প্রকৃতি আমূল বদলে যাবে।’
লোকসভা ভোটে কংগ্রেস তার আসনসংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে। লোকসভায় বিরোধী নেতার মর্যাদা আদায় করে নিয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে ভোট হওয়ার কথা জম্মু–কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও ঝাড়খন্ড বিধানসভার। জম্মু–কাশ্মীরের ভোট করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে এখনো কেন্দ্রের শাসন জারি রয়েছে। অন্য তিন রাজ্যের মধ্যে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় ক্ষমতাসীন বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীরা। ঝাড়খন্ডে ক্ষমতায় রয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট।
দলকে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সোনিয়া তাঁর ভাষণে জোর দেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা ও জনবিরোধী নীতির ওপর।
সোনিয়া বলেন, বাজেট সাধারণ মানুষকে আশাহত করেছে। মূল্যবৃদ্ধি কমানো ও বেকারত্ব দূর করার কোনো বাস্তববাদী উদ্যোগ বাজেটে দেখা যায়নি। এটাও বেশ বোঝা যাচ্ছে, দেশের বন্ধ থাকা জনগণনা শুরু করার কোনো ইচ্ছাও সরকারের নেই। ২০২১ সাল থেকে জনগণনা বন্ধ রয়েছে। ফলে জানা যাচ্ছে না দেশের মোট জনসংখ্যা এবং তার মধ্যে তফসিল জাতি, উপজাতি, অনগ্রসর মানুষের সংখ্যা কত। কিন্তু এর ফলে সাধারণ দরিদ্র মানুষের আরো একটি ক্ষতি হচ্ছে।
সোনিয়া গান্ধী বলেন, জনগণনা না হওয়ায় ১২ কোটি দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ ২০১৩ সালের খাদ্য নিরাপত্তা আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সোনিয়া কংগ্রেস সদস্যদের মনে করিয়ে দেন, ওই আইন কংগ্রেস সরকারই তৈরি করেছিল। বিজেপি তার নাম বদলে করেছে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা।
সোনিয়া বলেন, লোকসভা ভোটের ফল থেকে বিজেপি শিক্ষা নেবে বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বিজেপি তাদের সেই পুরোনো মানুষের সঙ্গে মানুষের বিভাজন ঘটানোর নীতি আঁকড়ে চলেছে। ভয়, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে চলেছে। সরকারি কর্মীরা যাতে খোলাখুলি আরএসএস করতে পারেন সে জন্য তারা নিয়ম বদলে দিয়েছে। তিনি বলেন, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করছেন ঠিকই, কিন্তু তা সাময়িক। দেশকে রক্ষা করার উপায় একটাই—বিজেপির শাসনের অবসান ঘটানো।
দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্নটিও তুলে ধরেন সোনিয়া। তিনি বলেন, কাশ্মীরে উগ্রপন্থী হানা ঘটে চলেছে বিরামহীন। গত কয়েক দিনে ১১টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ ও জওয়ানেরা মারা যাচ্ছেন। মণিপুর এখনো জ্বলছে। অথচ সরকারের ভাবখানা এমন যেন সবকিছু ঠিকঠাক চলছে।