মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় কোন দল থেকে কারা থাকতে পারেন
নরেন্দ্র মোদি আজ রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনের উন্মুক্ত আঙিনায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের জন্য শপথ নিতে চলছেন। তার আগে সকালে তিনি প্রথমে যান রাজঘাটে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাতে।
সেখান থেকে তিনি যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর স্মৃতিসৌধ ‘সদৈব অটল’-এ। তারপর জাতীয় যুদ্ধ স্মারক। প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন প্রধানকে পাশে নিয়ে শ্রদ্ধা জানান দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া বীর সেনানীদের।
সন্ধ্যায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ঘিরে রাষ্ট্রপতি ভবন সেজে উঠেছে। নতুন মন্ত্রিসভায় কারা যোগ দিচ্ছেন, সেই তালিকা চূড়ান্ত করতে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বিজেপি সংসদ সদস্যদের এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, বিজেপি গুরুত্বপূর্ণ চার মন্ত্রণালয়ের একটিও শরিকদের ছাড়ছে না। কোন দলের কারা থাকছেন, পুরোনোদের কারা মন্ত্রিসভায় থাকছেন, সেসব বিষয়ে এসব সূত্র থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে।
শপথ অনুষ্ঠানে প্রায় ৯ হাজার অতিথি অভ্যাগতের সঙ্গে উপস্থিত থাকছেন প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেশেলসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ। দুজনেই গত শনিবার দিল্লি চলে এসেছেন। আজ দুপুরের মধ্যে চলে আসছেন মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীণ কুমার জগন্নাথ, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোগবে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কুমার দহল ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। নির্বাচনে জয়ের পর এটাই হতে চলেছে মুইজ্জুর প্রথম ভারত সফর। কূটনৈতিকমহল মনে করছে, সে দেশের পালাবদলের পর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছে, এই আমন্ত্রণ ও গ্রহণের মধ্য দিয়ে তা কিছুটা সহজ হবে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ পাওয়ার পর মালদ্বীপ খুবই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলে ভারতীয় কূটনীতিকেরা মনে করছেন।
নতুন মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন
নতুন মন্ত্রিসভায় কারা যোগ দিচ্ছেন সেই তালিকা চূড়ান্ত করতে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বিজেপি সংসদ সদস্যদের এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, বিজেপি গুরুত্বপূর্ণ চার মন্ত্রণালয়ের একটিও শরিকদের ছাড়ছে না। অর্থ, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা তারা হাতে রাখবে। শনিবার অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, সভাপতি জে পি নাড্ডা ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এল সন্তোষের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠকে ঠিক হয়, টিডিপি ও জেডিইউকে একটি করে পূর্ণমন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হবে। টিডিপিকে লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের পদও দেওয়া যেতে পারে। এই দুই বড় শরিক ছাড়া অন্য শরিকদেরও প্রত্যেককে একজন করে প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হবে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব শরিকদের বলেছেন, মন্ত্রণালয় নিয়ে তাঁরা যেন অযৌক্তিক দাবি না করেন।
পুরোনোদের কারা থাকছেন
পুরোনো মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন। যেমন রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নীতীন গড়কড়ি, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, অনুরাগ ঠাকুর। তাঁরা ছাড়া যাঁদের জায়গা পাওয়ার কথা, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবার সংসদ সদস্য হওয়া শিবরাজ সিং চৌহান, হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর, আসামের নেতা সর্বানন্দ সোনোয়াল, অরুণাচল প্রদেশের কিরেন রিজিজুরা। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে সদস্য ছিলেন মতুয়া নেতা শান্তনু ঠাকুর। এবারও তিনি মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন।
শরিকদের মধ্যে মন্ত্রী হতে চলেছেন জেডিএস নেতা কুমারস্বামী, এলজিপি নেতা চিরাগ পাসোয়ান, ‘হাম’-এর জিতেন রাম মাঞ্ঝি, আরএলডির জয়ন্ত চৌধুরী ও আপনা দলের অনুপ্রিয়া প্যাটেল। অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। নির্মলা সীতারমণ কি আবার অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন? জয়শঙ্করকে কি নতুন দায়িত্ব দেওয়া হবে? আজকের প্রধান জিজ্ঞাসাগুলোর অন্যতম এটাও।
টিডিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলের দুই সংসদ সদস্য চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি ও রাম মোহন নাইডু মন্ত্রী হবেন। জেডিইউ মন্ত্রী হিসেবে পছন্দ করেছে দলের সাবেক সভাপতি রাজীব রঞ্জন সিং (লালন) ও ‘ভারতরত্ন’ কর্পূরী ঠাকুরের ছেলে রাজ্যসভার সদস্য রামনাত ঠাকুরকে।
সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুষ্ঠানের পর নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য ও বিদেশি অতিথিদের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নৈশভোজের আপ্যায়ন করবেন। সেই অবসরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি কিছু সময় আলাপ-আলোচনা করবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা আজ দেখা করবেন বিজেপির নবতিপর নেতা সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানির সঙ্গে। বাংলাদেশের সূত্রের খবর, আদভানির পরিবারের পক্ষ থেকে এই সাক্ষাৎকারের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। বিকেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আসার কথা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর। এই সূত্র অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সফররত অন্য বিদেশি নেতাদের কারও কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি দিল্লি ত্যাগ করবেন। তার আগে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের একটা সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের খবর।