মসজিদ-মন্দির বিতর্কে ভাগবতের মন্তব্যকে সমর্থন দিল আরএসএসের হিন্দি মুখপত্র পাঞ্চজন্য

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবতছবি: রয়টার্স

ভারতে মসজিদ–মন্দির বিতর্ক নিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবতের মন্তব্যকে এবার সমর্থন করল সংগঠনের হিন্দি মুখপত্র ‘পাঞ্চজন্য’। সংঘপ্রধানের বক্তব্য সমর্থন করে হিন্দি মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, এ বিতর্ক অপ্রয়োজনীয়ই শুধু নয়, বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীও।

চার বছর আগে বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদে জরিপের নির্দেশ জারির সময় এমনই কথা বলেছিলেন মোহন ভাগবত। তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি মন্দিরের নিচে ‘শিবলিঙ্গ’ খোঁজার চেষ্টা অর্থহীন। তখন ওই মন্তব্য তেমন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করেনি। গত মাসে উত্তর প্রদেশের সম্ভলে জামে মসজিদে জরিপের নির্দেশ, তারপর রাজস্থানের আজমির শরিফের ক্ষেত্রেও একধরনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এমন ধরনের মামলা রুজু, গ্রহণ ও নির্দেশ বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর মোহন ভাগবত নতুন করে সে কথার অবতারণা করেন। সেই থেকে সংঘ পরিবারের মধ্যেই শুরু হয় বিতর্ক।

আরএসএস অনুমোদিত ইংরেজি মুখপত্র ‘দ্য অর্গানাইজার’ গত সপ্তাহে সম্পাকদীয় নিবন্ধে সংঘপ্রধানের মন্তব্যের বিরুদ্ধমত প্রকাশ করে। লেখা হয়, মন্দির না মসজিদ, সে সত্য জানা জরুরি। সভ্যতা মানুষকে সে অধিকার দিয়েছে। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য বিতর্কিত স্থান ও কাঠামোর প্রকৃত ইতিহাস জানার সেই অধিকার মানুষের আছে। ভাগবতের বক্তব্য এভাবেই নস্যাৎ করা হয়েছিল।

ওই সম্পাদকীয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় পাঞ্চজন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। দুই দিন আগে মুখপত্রের সম্পাকদীয়তে লেখা হয়, সংঘপ্রধানের মন্তব্যে মন্দির–মসজিদ বিতর্কের বিবেচনাবোধ প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে দেশজুড়ে যে বিতর্ক ও প্রচার চালানো হচ্ছে, তা অনাবশ্যক ও বিভ্রান্তিকর। মোহন ভাগবত তা এড়ানোর পরামর্শই দিয়েছেন।

সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, মন্দির হিন্দুদের কাছে বিশ্বাসের বিষয়। রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তা ব্যবহার করা ঠিক নয়। ইদানীং এ বিতর্ক এক চিন্তাজনক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। তাতে হাওয়া দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

ইংরেজি ও হিন্দি—দুই ভাষায় প্রচারিত দুই মুখপত্রের এই ভিন্ন মনোভাব যাতে আর কোনো বিতর্ক ও ধন্দ সৃষ্টি না করে, সে জন্য দ্য অর্গানাইজারের সম্পাদক প্রফুল্ল কেতকর এক বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলেছেন, মোহন ভাগবতের মন্তব্য ও সম্পাকদীয় নির্যাসের ব্যাখ্যা নিয়ে অহেতুক ও অর্থহীন বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইংরেজি মুখপত্র সব সময় সম্প্রীতির পক্ষে। ভারত যাতে বিশ্বগুরু হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য সংঘ পরিচালক সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন। তাঁরা সেই বক্তব্য পূর্ণভাবে সমর্থন করেন।

এ বিতর্কের মধ্যেই আজমির শরিফে খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগায় চাদর পাঠাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৮১৩তম ওরস উপলক্ষে ওই চাদর চড়ানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া চাদর দরগায় নিয়ে যাবেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ও বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি জামাল সিদ্দিকি।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিবছর পবিত্র ওরস উপলক্ষে আজমির শরিফে চাদর চড়িয়ে আসছেন নরেন্দ্র মোদি। গতবার সেই চাদর নিয়ে জামাল সিদ্দিকির সঙ্গে আজমির গিয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।

এবার প্রধানমন্ত্রী যাতে আজমির শরিফে চাদর না চড়ান, সে জন্য তাঁকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলেন হিন্দু সেনা সংগঠনের নেতা বিষ্ণু গুপ্ত। দরগার চরিত্র নির্ধারণে জরিপের নির্দেশ দিতে রুজু করা মামলা তাঁরই। তাঁর দাবি, দরগার তলায় আগে শিবমন্দির ছিল। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। বিচারের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী যেন আজমির শরিফে চাদর না চড়ান।