বিজেপির রাজনীতিতে নতুন ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হয়ে উঠছে যোগীর উত্তর প্রদেশ

উত্তর প্রদেশের বারানসিতে মোদির সঙ্গে প্রার্থনায় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথফাইল ছবি: এএনআই

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার এখনো দুই মাসও পেরোয়নি। টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে জোট সরকার গঠন করতে পারলেও এবার বিজেপির ফলাফলে রীতিমতো বিপর্যয় নেমেছিল। বিশেষ করে দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে।

সেখানে বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন প্রকাশ্যে। উত্তর প্রদেশে বিজেপির একটি অংশ এখন রাখঢাক না করেই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সমালোচনা করছে। গেরুয়াধারী যোগীও পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যা সেখানে সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে।

যদিও উত্তর প্রদেশ বিজেপিতে যোগীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে—এমনটা বলার সময় এখনো আসেনি; তবে কার নেতৃত্বে যোগীর বিরুদ্ধে বিরোধ দানা বাঁধছে, তা কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। তিনি হলেন যোগীর উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য, যিনি মোদি-অমিত শাহর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

উত্তর প্রদেশে সামাজিকভাবে ও শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর (ওবিসি) রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে জনপ্রিয় মুখ কেশব, দীর্ঘদিন ধরেই যাঁর নজর মুখ্যমন্ত্রী পদের দিকে।

কেশবের অভিযোগ, যোগী তাঁর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। এ নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে একবার কেশব বলেছিলেন, ‘দল সরকার থেকে বড়।’

আরেক উপমুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক এবং উত্তর প্রদেশ বিজেপির প্রধান ভূপেন্দ্র চৌধুরীও কেশবকে সমর্থন করেছেন। এমনকি উত্তর প্রদেশে বিজেপির শরিক দলগুলোর মুখেও কেশবেরই সুর।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে মাত্র ৩৩টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস জোট জিতেছে ৪৩টি আসনে। অথচ গত নির্বাচনে বিজেপি উত্তর প্রদেশে ৬৪টি এবং তার আগের বার ৭৩টি আসনে জেতে।

ভারতের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৮০ আসন রয়েছে উত্তর প্রদেশ থেকে।

ব্যক্তিগত আলাপে অনেকে এবার লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে বিজেপির হেরে যাওয়ার কারণ হিসেবে ‘অন্তর্ঘাতের’ কথা বলছেন। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে ‘রাজপুত’ সম্প্রদায়ের কথা বলছেন। যোগী রাজপুত সম্প্রদায় থেকে এসেছেন। বলা হচ্ছে, এবার রাজপুতরা ‘ভোট দিতে যাননি’ বা ‘বিজেপির বিরুদ্ধে’ ভোট দিয়েছেন, বলা হচ্ছে।

উত্তর প্রদেশ বিজেপিকে এখন রাজপুত ছাড়াও যাদব নন—এমন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। ভাবতে হচ্ছে রাজ্যের দলিতদের নিয়েও, যাঁরা এবারের লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। বিজেপি খুব ভালো করেই জানে, রাজ্যের তৃণমূল পর্যায়ের এই ভোটাররা, যাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, যাঁদের সংখ্যা অনেক বেশি, তাঁদের সমর্থন আবার ফিরে পাওয়া কতটা কঠিন হতে পারে।

আরও পড়ুন

যোগী দিন দিন রাজপুতদের নেতা হয়ে উঠছেন, যেখানে কেশবের পক্ষে যোগীর স্থান পূরণ করা প্রায় অসম্ভব। উত্তর প্রদেশের যে অংশকে ‘মৌর্য বেল্ট’ (এলাহাবাদ বিভাগ) বলা হয়, সেখানেও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল ভালো ছিল না।

উত্তর প্রদেশে বিজেপির মধ্যে এই ক্ষমতার টানাটানি এখন প্রকাশ্যে। এই দ্বন্দ্ব এখন বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যেমন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কি এখন আর উত্তর প্রদেশে দলের অবস্থান পুনরায় সুসংহত করার পরিকল্পনায় যোগীকে অংশ করতে চাইছেন? নাকি বর্তমান অবস্থায় যোগীর ওপর চাপ বজায় রাখার এবং মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করার উপায় নিয়ে ভাবছেন? এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কি উত্তর প্রদেশে ভাগ হয়ে যাওয়া বিজেপির মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন?