বাংলাদেশি ক্রেতা নেই: সুনসান কলকাতার ঈদবাজার
পবিত্র রমজান শেষের দিকে। দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ মার্চ বা আগামী ১ এপ্রিল ভারতজুড়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হবে। ঈদ সামনে রেখে এখন চলছে কেনাকাটা। কিন্তু অতীতের মতো এবার কলকাতার ঈদবাজারের সেই রমরমা নেই। কারণ, বাংলাদেশের ক্রেতা নেই বললেই চলে।
কলকাতার কিছু বাজার বাংলাদেশি ক্রেতাদের পছন্দের জায়গা হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশি ক্রেতা না থাকায় এবার সেসব বাজার অনেকটা ক্রেতাশূন্য। বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারতের ভিসা না পাওয়ায় এবার বাংলাদেশি ক্রেতারা কলকাতায় আসতে পারেননি। তবে চিকিৎসার ভিসা নিয়ে কলকাতায় আসা দু–চারজন বাংলাদেশি পর্যটক বলেছেন, তাঁরাও কলকাতায় ঈদের কেনাকাটা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
অতীতে প্রতিবছরই ঈদ সামনে রেখে প্রচুর বাংলাদেশি কলকাতায় কেনাকাটা করতে আসতেন। এবার সেই বাংলাদেশি ক্রেতার সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে।
ঢাকা থেকে কলকাতায় এসেছেন ব্যবসায়ী মাসুম রেজা। বললেন, তিনি এসেছেন ক্যানসারের চিকিৎসা নিতে; ঈদের বাজার করার জন্য নয়। তবে সময় পেলে বাজারে একটু ঢুঁ মারার ইচ্ছা আছে। বললেন, উঠেছেন নিউমার্কেটের পেছনে মার্কুইস স্ট্রিটের একটি হোটেলে। হোটেল ফাঁকা। আগে রুম পাওয়া যেত না। এখন সব হোটেলেই মিলছে রুম। দালালের উৎপাত নেই।
মাসুম রেজা বললেন, পর্যটক ভিসা একরকম বন্ধ থাকায় কলকাতার ঈদবাজার জমে ওঠেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রেন ও বাস চলাচল বন্ধ থাকায় কার্যত বন্ধ দুই দেশের পর্যটক আসা–যাওয়া।
আরেক পর্যটক বলেছেন, বাংলাদেশের বহু মানুষ কলকাতায় ঈদের বাজার করার জন্য মুখিয়ে থাকেন। ঢাকা থেকে এখানে কাপড়চোপড় ও পোশাকের দাম কম। তবে এবার আর ঈদের বাজার করতে কলকাতায় আসার সুযোগ হলো না। বাংলাদেশি ক্রেতাদের অভাবে এবার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেছে বহু দোকানপাট ও হোটেলের। এলাকার দোকানপাট খাঁ খাঁ করছে। রেস্তোরাঁ, হোটেল, কাপড়চোপড়ের দোকানে নেই বাংলাদেশি ক্রেতা।
মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী শ্যামল সাহা বলেছেন, পর্যটক না এলে বৈদেশিক মুদ্রা কোথায় মিলবে?
কলকাতার ইফতারির বাজারও জৌলুশ হারিয়েছে। বাংলাদেশি পর্যটকেরা ইফতারির নানা খাবার নিয়ে বাজার সরগরম রাখলেও এবার বাংলাদেশি ক্রেতার আভাবে সুনসান ইফতারির বাজার।
কলকাতার বাংলাদেশিদের হোটেলপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বহু হোটেলই কার্যত খালি পড়ে আছে। চিকিৎসা ও হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মেঘনা হেলথ কেয়ারের কর্ণধার শৈলেন হালদার প্রথম আলোকে বলেন, হোটেল ব্যবসা এবার প্রায় শূন্য। বাংলাদেশি পর্যটক নেই। হোটেলের মালিকদের কপালে হাত। রোগীও তেমন আসছেন না, হোটেল ফাঁকা।
শৈলেন বলেন, শুধু বাংলাদেশের মানুষ নন, এই ঈদের কেনাকাটা করতে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগঞ্জের মানুষসহ আশপাশের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ কলকাতায় এসে থাকেন। এবার সেই সংখ্যাও কম।
তবে কলকাতার ফুটপাতে ক্রেতার কিছুটা ভিড় দেখা যায়। সেটাও অন্যান্যবারের তুলনায় কম।
নিউমার্কেট, সদর স্ট্রিট, মার্কুইস স্ট্রিট, কলিন স্ট্রিট, এস এন ব্যানার্জি রোড, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, সদরঘাট, বড়বাজার—সর্বত্র একই চিত্র। কোথাও বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভিড় নেই। শুধু নিউমার্কেটই নয়, সেই জাকারিয়া স্ট্রিটের নাখোদা মসজিদসংলগ্ন বাজার, ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদসংলগ্ন বাজার—সর্বত্রই পবিত্র রমজানের শেষ দিনগুলো অনেকটা ক্রেতাশূন্য অবস্থায় পার করছে।