বিহারে আস্থা ভোট নিতীশের জয়
ভারতের বিহার রাজ্যের বিধানসভায় প্রত্যাশা মতো আস্থা ভোটে জয়ী হলেন জেডিইউ নেতা নিতীশ কুমার। প্রয়োজনের তুলনায় শাসক জোট অতিরিক্ত ভোট পেতে চলেছে নিশ্চিত হওয়ার পর আরজেডি, কংগ্রেস ও বামপন্থীরা সভা কক্ষ ত্যাগ করেন।
বিরোধীদের ওয়াক আউটের পর কণ্ঠ ভোটে আস্থা প্রস্তাব পাস হলেও নিতীশ কুমার ভোট গণনার দাবি জানান। দেখা যায়, আস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৩০টি, বিরুদ্ধে একটিও নয়। ফলে আগামী বছর বিধানসভার নির্বাচন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী থাকা নিশ্চিত করে ফেললেন তিনি।
আজ সোমবার আস্থা ভোটের আগেই সরানো হয় বিদায়ী বিধানসভার স্পিকার অবধ বিহারি চৌধুরীকে। আরজেডি ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকার গঠনের পর জেডিইউয়ের অবধ বিহারি স্পিকার পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁকে সরানোর প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৫টি, বিরুদ্ধে ১১২টি। বিহার বিধানসভার মোট সদস্য ২৪৩।
আস্থা ভোট শুরুর আগেই বোঝা যায় নিতীশের ক্ষমতায় থাকা স্রেফ সময়ের প্রতীক্ষা। বিধানসভা কক্ষে জেডিইউ সদস্যদের মধ্যে বসতে দেখা যায় আরজেডির তিন বিধায়ক চেতন আনন্দ, নীলম দেবী ও প্রহ্লাদ যাদবকে।
আস্থা ভোটের প্রস্তাব পেশের পর বিরোধী নেতা হিসেবে বক্তৃতা করেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। ভাষণে তিনি সারাক্ষণ কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারকে। নিতীশকে ‘পাল্টু কুমার’ সম্বোধন করে তিনি জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী কি গ্যারান্টি দিতে পারবেন, উনি আরও একবার জোট বদলাবেন কি না?
নিতীশের উদ্দেশে তেজস্বীর প্রশ্ন, ‘বিহারের মানুষ জানতে চায়, কেন আপনি বারবার জোট বদল করেন। টানা নয়বার আপনি মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন। রেকর্ড করলেন। এ জন্য অবশ্য আপনাকে অভিনন্দন।’
তেজস্বীর দাবি, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের অনগ্রসর নেতা কর্পূরী ঠাকুরকে মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন’ সম্মান দেওয়াটা ছিল নিতীশকে জোটে টানার অন্যতম প্রধান শর্ত। কর্পূরী ঠাকুরকে ভারতরত্ন দেওয়ায় তাঁরা খুবই খুশি। কিন্তু ঘটনা হলো, বিজেপি এই সম্মানকে ক্ষমতা লাভের হাতিয়ার করে তুলেছে। একটা চুক্তির মতো করে তুলেছে। ব্যাপারটা এই রকম, বিজেপি বলছে আমাদের সঙ্গে থাক, তা হলে ভারতরত্ন পাবে।
বিরোধীদের আক্রমণ করতে ছাড়েননি নিতীশও। আস্থা ভোটের আগে তিনি অভিযোগ করেন, আরজেডি দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা শুধু টাকা কামানোয় ব্যস্ত ছিল। লালু-রাবড়ির শাসনকালে বিহারে সবচেয়ে বেশি দাঙ্গা হয়েছে। তিনি এ কথাও বলেন, বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে তিনি শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। সফল হননি।
নিতীশের মন্ত্রিসভার দুই উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপি সদস্য সম্রাট চৌধুরী ও বিজয় সিনহা বলেন, বিহারকে তাঁরা সন্ত্রাস ও দুর্নীতি থেকে মুক্ত করবেন।
আস্থা ভোট উপলক্ষে দুই জোটের শরিকরাই তাদের বিধায়কদের কড়া নজরে রেখেছিল। বিজেপি ও জেডিইউ বিধায়কদের মতো কংগ্রেস ও আরজেডি বিধায়কদেরও আগলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও শাসক গোষ্ঠী তাদের সম্মিলিত সংখ্যার চেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছে।