আন্দোলনের মুখে আর জি করের ‘বিতর্কিত’ অধ্যক্ষ নতুন পদও হারালেন
আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় টানা আন্দোলনে উত্তাল রয়েছে কলকাতাসহ পুরো পশ্চিমবঙ্গ। গতকাল বুধবারও বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে মিছিল হয়েছে। আন্দোলনের জেরে আর জি করের ‘বিতর্কিত’ অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ আগেই নিজের পদ হারিয়েছেন। এবার নতুন পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
গতকাল সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে মিছিল করে স্বাস্থ্য ভবনে যান আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। সেখানে নিজেদের দাবিদাওয়া জানান তাঁরা। সেই দাবি মেনে রাতেই আর জি করের নতুন অধ্যক্ষ, নতুন সুপার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ও চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
আন্দোলনের মুখে সন্দীপ ঘোষকে আর জি কর থেকে সরিয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই পদে যোগ দিতে পারেননি তিনি। গতকাল দাবির মুখে সেই পদ থেকেও তাঁকে সরানোর কথা জানান রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।
সন্দ্বীপের বিরুদ্ধে হাসপাতালের সম্পদ তছরুপ করার অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ইডির তদন্ত চেয়ে মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টেও।
এদিকে চিকিৎসক হত্যায় তদন্তের জন্য নিয়োজিত সিবিআই আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন পেশ করতে পারে। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকারও আর জি কর হাসপাতালে হামলার প্রতিবেদন পেশ করতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আর জি কর হাসপাতালের নিরাপত্তায় আজ থেকে দুই কোম্পানি সিআইএসএফ জওয়ান মোতায়েন করার কথা রয়েছে। গতকাল সিআইএসএফ ডিআইজি কে প্রতাপ সিং আর জি কর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সিবিআই ষষ্ঠবারের মতো সন্দ্বীপকে জেরা করেছে। তবে সিবিআই এখনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, সে ব্যাপারে মুখ খোলেনি। তাই আন্দোলকারী চিকিৎসকেরা যে এখনই আন্দোলন থেকে সরে যাবেন, তেমন কোনো আলামত দেখা যায়নি। আন্দোলনকারীরা জানান, এ হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তদের শনাক্ত করার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
ধর্ষণ–হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের শনাক্ত করার দাবিতে গতকাল দিনভর আন্দোলন হয়েছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গায়। এই প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’। মিছিলে যোগ দেন রাজ্যের ‘জয়েন্ট ফ্রন্ট অব ডক্টরস’–এর সদস্যরা।
ওই ঘটনায় কংগ্রেসের মিছিল লালবাজারের অদূরে আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেসের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। বিজেপি গতকাল থেকে শ্যামবাজারে মঞ্চ বানিয়ে পাঁচ দিনের অবস্থান ধর্মঘটে বসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে মৌলালী মোড় থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এক প্রতিবাদ মিছিল করেছে বিজেপি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও কলেজ স্কয়ার থেকে মিছিল করেছেন। মিছিল করেছেন চিকিৎসক, ক্রীড়াবিদ, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংস্কৃতিক, সমাজকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। স্ত্রী–কন্যাকে নিয়ে ক্রীড়াবিদদের প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীও।