হাসপাতালে ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড : কলকাতায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতি আংশিকভাবে শেষ হচ্ছে
পশ্চিমবঙ্গের জুনিয়র চিকিৎসকেরা প্রায় দেড় মাস আন্দোলনের পরে কাজে ফিরতে চলেছেন। শনিবার থেকে তাঁরা কাজ শুরু করবেন। তবে এখনই পূর্ণমাত্রায় কাজ শুরু করবেন না। আপাতত শুধু জরুরি পরিষেবা বিভাগে কাজ করবেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জুনিয়র চিকিৎসকেরা এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
জুনিয়র চিকিৎসকেরা সব বিভাগে কবে যোগ দেবেন, তা না জানালেও আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন। পূর্ব কলকাতার সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ৯ দিন ধরে যে বিক্ষোভ অবস্থান চলছিল, তা–ও শেষ হচ্ছে। শুক্রবারই ভেঙে দেওয়া হবে ওই মঞ্চ। এর পরে শুক্রবার বেলা তিনটা নাগাদ স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে তাঁরা মিছিল করে সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্স নামের একটি ভবনে যাবেন। যেখানে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) দপ্তর রয়েছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই আর জি কর হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা তদন্ত করছে। তাঁরা যাতে দ্রুত তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়, তার জন্য চাপ সৃষ্টি করতেই সিবিআই দপ্তরে গিয়ে আন্দোলন শেষ করবেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। এখন থেকে ভবিষ্যতে সিবিআইকে চাপে রাখাই তাঁদের অন্যতম কাজ হবে বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন চিকিৎসক।
গত ৯ আগস্ট কলকাতার অন্যতম প্রধান মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল আর জি করে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার করা হয়। এর ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গসহ সারা ভারতে প্রতিবাদ শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গে তা তীব্র আকার ধারণ করে। শুরু হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, মিটিং-মিছিল। চিকিৎসকের মৃত্যুর এক মাস পরেও এই বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে।
জুনিয়র চিকিৎসকদের অন্যতম নেতা দেবাশিস হালদার বৃহস্পতিবার রাতে জানান, তাঁরা শুক্রবারের মিছিলের পরে নিজ নিজ কলেজ-হাসপাতালে ফিরে কাজ শুরু করবেন। যেখানে চিকিৎসা খুব প্রয়োজন সেই জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করা হবে এবং শুধু সেই অতিপ্রয়োজনীয় বিভাগেই আপাতত সেবা দেওয়া হবে। অন্য বিভাগ বা জায়গায় কর্মবিরতি চলবে। প্রয়োজনে আবার পূর্ণমাত্রায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
এত দিন যে দাবিগুলো নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংলাপ ও সংঘাত চলছিল, তার অনেকগুলোই এরই মধ্যে পূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি অপূর্ণ রয়ে গেছে।
যে দাবিগুলো পূর্ণ হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন, সেগুলোর মধ্যে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণ, স্বাস্থ্য কর্তাদের অপসারণ অন্যতম। আর জি কর মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ বা টালা থানার দায়িত্বে থাকা অফিসার অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা নিজেদের আন্দোলনের ফসল বলে মনে করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকেরা। এই ব্যক্তিদের বিচার চলমান রয়েছে। এখনো সাজা হয়নি। যত দিন না সাজা হচ্ছে, তত দিন আন্দোলন সীমিত পরিসরে চলবে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হলেও কিছু রাজনৈতিক দল আন্দোলনে সরাসরি মদদ দিয়েছে। তাদের মধ্যে ছিল কিছু নকশালপন্থী দল ও বামপন্থী সংগঠন সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া-কমিউনিস্ট (এসইউসিআই)।
সূত্রটি আরও জানায়, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এ নিয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। দলের নেতা-নেত্রীদেরও বলে দেওয়া হয়েছিল যে তাঁরা যেন এই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য না করেন। কারণ, সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ তৃণমূলের ওপরে আরও খেপে যেতে পারে। তবে ভবিষ্যতে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসবে বলে আমরা মনে করছি।
এদিকে চিকিৎসকদের আন্দোলন আপাতত থামলেও সুশীল ও নাগরিক সমাজ, রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কর্মসূচি এখনই থামবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তারা এখনো নিয়মিত মিটিং-মিছিল ও বিক্ষোভ করছেন। তাই শনিবার থেকে চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দেওয়ার পরেও পশ্চিমবঙ্গের সুশীল সমাজ নিজেদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন কি না, এখন সেটাই দেখার বিষয়।