কলকাতায় ‘দ্রোহের’ কার্নিভ্যালের ডাক চিকিৎসকদের

সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে সিবিআই দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন অনেকে। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, ১২ অক্টোবরছবি: ভাস্কর মুখার্জি

শারদীয় দুর্গপূজা উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এবারও কলকাতার ধর্মতলার মেয়ো রোডে ১৫ অক্টোবর ‘দুর্গা কার্নিভাল’ আয়োজন করা হয়েছে। তবে আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় একই দিন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে ‘দ্রোহের কার্নিভ্যাল’ আয়োজন করার ডাক দিয়েছে কলকাতার চিকিৎসকদের ৮টি সংগঠন নিয়ে গড়া চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে শারদীয় দুর্গাপূজার পর ‘দুর্গা কার্নিভ্যাল’ নামে এক বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এ উৎসবে থাকে রাজ্যের সেরা পূজামণ্ডপের দুর্গা প্রতিমা। হাজারো ভক্তের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরাও এ উৎসবে অংশ নেন, নাচে–গানে উৎসবে মাতেন। গত বছর এ উৎসবে যোগ দিয়েছিল রাজ্যের সেরা ৯৬টি পূজামণ্ডপ ও মণ্ডপের দুর্গা প্রতিমা।

আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ–হত্যাকাণ্ডে জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবারের দুর্গা কার্নিভ্যাল স্থগিত রাখার দাবি উঠেছিল। অনেকের দাবি সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এ উৎসব আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে।    

এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজার মধ্যেই ধর্ষণ–হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিতে গতকাল শনিবার বিকেলেও কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। নাগরিক সমাজের আহ্বানে ১৩২টি সংগঠন এ বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল।

সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে সিবিআই দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্স বা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট কার্যালয় এলাকা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ মিছিলে হাজারো মানুষ অংশ নেন।

বিক্ষোভ মিছিল থেকে ধর্ষণ-হত্যায় জড়িত মাত্র একজনের নামে সিবিআই যে অভিযোগপত্রটি দিয়েছে, তার প্রতিবাদ জানানো হয়। বিক্ষোভকারীরা বলেন, সংঘবদ্ধ এমন একটি অপরাধে মাত্র একজন  আসামি জড়িত, তাঁরা বিশ্বাস করেন না। নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে নতুন করে অভিযোগপত্র দিতে হবে।

বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) দপ্তর অভিমুখে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদলকে সিবিআই দপ্তরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর বিক্ষোভকারীদের ওই প্রতিনিধিরা সিবিআইয়ে দপ্তরে ঢুকে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পেশ করেন।

নবীন চিকিৎসদের আমরণ অনশন চলছে

নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আজ রোববার নবম দিনের মতো আমরণ অনশন করেছেন নবীন চিকিৎসকেরা। গত ৫ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটায় কলকাতার ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেন সাত জন নবীন চিকিৎসক। গতকাল শুক্রবার আরও দুজন নবীন চিকিৎসক অনশনে যোগ দেন। অনশন চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্তত তিনজন চিকিৎসককে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

অনশনে অসুস্থ হলে অনিকেত মাহাতো নামে একজন চিকিৎসক আর জি কর হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন। গতকাল শনিবার রাতে আরও এক চিকিৎসক অসুস্থ হলে তাঁকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। এর পর গত শুক্রবার অলোক ভার্মা নামের এক চিকিৎসক অসুস্থ হন। তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে আংশিক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন কলকাতার ছয়টি বেসরকারি হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সিনিয়র চিকিৎসকেরা। হাসপাতালগুলো হলো পিয়ারলেস হাসপাতাল, ফরটিস হাসপাতাল, মেডিকো হাসপাতাল, উডল্যান্ডস হাসপাতাল, বি এম বিড়লা হাসপাতাল ও কোঠারি হাসপাতাল। আগামী ১৪ ও ১৫ অক্টোবর থেকে কর্মবিরতিতে যাবেন তাঁরা।

নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ–হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে গতকাল শনিবার আরামবাগ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩৮ জন চিকিৎসক একসঙ্গে ইস্তফা দিয়েছেন। এর আগে আর জি কর হাসপাতাল, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল, কলকাতা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, এনআরএস মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা ‘গণ–ইস্তফা’ দিয়েছেন।