দিল্লির বৈঠকে থাকবেন না মমতা, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফা ভোট আগামী ১ জুন। ওই দিনই দিল্লিতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক ডাকা হয়েছে। তবে এতে সবাই যোগ দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, ওই দিন বৈঠক হলে তাঁর পক্ষে যোগ দেওয়া কঠিন। কারণ, সেদিন রাজ্যের ৯টি আসনে ভোট রয়েছে। তা ছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে গৃহহীন মানুষের মধ্যে ত্রাণের ব্যবস্থা নিয়ে তিনি ব্যস্ত থাকবেন।
১ জুন দিল্লিতে ওই বৈঠক ডেকেছেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। মমতা প্রথমেই নিজের গরহাজিরার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে দেওয়ায় ভোট–পরবর্তী জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা রকম প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তৃণমূল নেত্রী অবশ্য বলেননি, তাঁর হয়ে অন্য কাউকে ওই বৈঠকে পাঠানো হবে কি না।
মমতা যে কারণে তাঁর মনোভাব জানিয়েছেন, সেই কারণে আরও কোনো কোনো শরিক দলের নেতা বৈঠকে না–ও আসতে পারেন। যেমন উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নেতা অখিলেশ যাদব। কিংবা বিহারের আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব।
পশ্চিমবঙ্গের মতো উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যেও এবার ভোট হচ্ছে পুরো সাত দফায়। তিন রাজ্যেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের এই তিন প্রধান শরিক ভোট নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। তারা শেষ দিনের ভোট ছেড়ে ‘নির্বাচনোত্তর কৌশল’ নিয়ে আলোচনা করতে রাজ্য ছেড়ে দিল্লি আসবে কি? এই প্রশ্নও আলোচিত হচ্ছে।
১ জুন কংগ্রেস এই বৈঠক ডেকেছে বেশ কয়েকটি কারণে। প্রথমত, পরের দিন ২ জুন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তিহার কারাগারে ফিরে যেতে হবে। কেজরিওয়াল অবশ্য শারীরিক কারণে বেশ কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজনে জামিনের মেয়াদ সাত দিন বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টে এখন ছুটি চলছে। কেজরিওয়ালের আবেদন জরুরি ভিত্তিতে শোনা হবে কি না, তা বিবেচনার দায়িত্ব সর্বোচ্চ আদালত ছেড়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির ওপর। কংগ্রেস মনে করছে, কেজরিওয়ালের আবেদন অগ্রাহ্য হতে পারে। তাই কারাগারে ফেরত যাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে আলোচনা জরুরি।
দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস চাইছে ভোট গণনার দিন বিরোধী দলের এজেন্টদের বিশেষ বিশেষ বিষয়ে সতর্ক করে দিতে। সাবেক কংগ্রেস নেতা আইনজীবী কপিল সিব্বাল এ বিষয়ে কিছু ইতিকর্তব্য তৈরি করেছেন। সেগুলো গণনার দিন উপস্থিত এজেন্টদের বোঝানো দরকার। ওই বৈঠকে এসব বিষয় বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে কংগ্রেস সভাপতি মনে করছেন। সে জন্য সব দলের হাতে বাড়তি দু-এক দিন সময় রাখা দরকার।
তৃতীয়ত, ১ জুন সন্ধ্যায় প্রকাশিত হবে এক্সিট পোল বা বুথফেরত সমীক্ষার ফল। ওই সমীক্ষায় ভোটের ফলের সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতির একটা আঁচ পাওয়া যায়। কংগ্রেস চাইছে সেটা বুঝে নিজেদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা সেরে ফেলতে।
চতুর্থত, ৩ জুন ডিএমকে নেতারা দিল্লিতে তাঁদের দলীয় দপ্তরে করুণানিধির শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। সেখানে ‘ইন্ডিয়া’ নেতারা উপস্থিত থাকলেও জোট নিয়ে আলোচনার অবকাশ থাকবে না। এসব বিবেচনা করেই ১ জুন অসুবিধা সত্ত্বেও ওই বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রের দাবি।
বৈঠকে আসতে পারবেন না বলে মমতার মন্তব্য নতুন করে কিছুটা সংশয়ও সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনের আগে থেকেই ‘ইন্ডিয়া’ জোট নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের আসন সমঝোতা হয়নি। তা নিয়ে দুই দলের নেতাদের মধ্যে তিক্ততা ছড়িয়েছে। কংগ্রেস-সিপিএম জোটবদ্ধ হয়ে রাজ্যে লড়েছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
নির্বাচন চলাকালে মমতা একবার বলেছেন, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে তাঁরা বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন দেবেন। পরে তা সংশোধন করেছেন। ভোটের আগে থেকেই সিপিএম নেতৃত্ব ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী তৃণমূল কংগ্রেস-বিজেপির ‘আঁতাত’ নিয়ে সরব ছিলেন।
আবার মমতাও সম্প্রতি বলেছেন, তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট কাটতে বিজেপি টাকা দিয়েছে রাজ্যের কংগ্রেস ও সিপিএম নেতাদের। ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ও এবারের প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য। এই চাপান-উতোর ইন্ডিয়া জোটের এই দুই প্রধান শরিকের সম্পর্ককে এখনো স্বাভাবিক করে তুলতে পারেনি।
১ জুনের বৈঠক ঘিরে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। অবশ্য আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্য কোনো নেতা বৈঠকে আসবেন—এমন কথা জানাননি।