রাত জেগে কলকাতায় রাজপথ দখল নারীদের
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাতে রাজপথে নেমে এসেছেন হাজারো নারী।
‘রাত দখল করো’—এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন রাজপথে নারীরা নেমে আসেন। নারীনেত্রী রিমঝিম সিনহা এই কর্মসূচির ডাক দেন।
এই কর্মসূচি চলাকালে আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বহিরাগতরা সেখানে হামলা চালিয়েছে বলে ওই মেডিকেল কলেজের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন। তবে এখন তাঁরা নিরাপদে আছেন বলে জানান ওই শিক্ষার্থী।
গত শুক্রবার ভোরে আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারতলায় ডিউটি শেষ করে বিশ্রাম নেওয়া এক ছাত্রীর মরদেহ পাওয়া যায়। অভিযোগ, ওই নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
এ নিয়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে আর জি কর হাসপাতালসহ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিবাদী মিছিলে প্রকম্পিত ছিল কলকাতা। সবার একটাই দাবি, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাও, আসল ষড়যন্ত্রকারীদেরও প্রকাশ্যে আনো।
গতকাল প্রতিবাদ মিছিল করেছে কলকাতার নাগরিক সমাজ। কলেজ স্কয়ার থেকে শুরু হওয়া এই মিছিল শেষ হয় আরজি কর হাসপাতালে। মিছিলে পা মেলান শিক্ষাবিদ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার, সাবেক মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য, মন্দাক্রান্ত সেন, চন্দন সেন, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, রমলা চক্রবর্তী প্রমুখ।
কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রতিবাদ মিছিল বের করে কলেজ স্কয়ার থেকে। মিছিলটি আর জি কর হাসপাতালে এলে পুলিশ আটকে দেয় মিছিল। এরপরে মিছিলকারীরা হাসপাতালের সামনের সড়কে বসে পড়েন। মিছিলে ছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। মিছিলকারীরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কংগ্রেসও অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল বের করেছে। সিপিএমের অঙ্গসংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনও আলাদা প্রতিবাদ মিছিল করে। প্রতিবাদ মিছিল বের করেছেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও।
এ ছাড়া ভারতের সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীও এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা বলেন, মেডিকেল কলেজের মতো জায়গা যদি চিকিৎসকদের নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে কোন ভরসায় মেয়েদের পড়তে পাঠানো হবে? তিনি আরও বলেছেন, ‘ন্যায়বিচারের বদলে দোষী ব্যক্তিদের বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে।’
এদিকে গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট এই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে দিয়েছে। এরপর গতকাল সকালেই সিবিআই তদন্তকাজ শুরু করে। তদন্তের জন্য দিল্লি থেকে এসেছে সিবিআইয়ের একটি বিশেষ দল। তারা ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আলামত সংগ্রহ করছে।