উত্তর প্রদেশে মহাকুম্ভমেলায় পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৭ জনের মৃত্যু
ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে মহাকুম্ভমেলায় পদদলিত হয়ে সাতজনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১০ জন। পবিত্র স্নান নিতে মহাকুম্ভমেলায় লাখ লাখ মানুষ জড়ো হলে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
ড্রোনে ধারণ করা ফুটেজে দেখা গেছে, মহাকুম্ভমেলার সবচেয়ে শুভ দিনটি উপলক্ষে পুণ্যস্নানের জন্য বুধবার ভোরের আলো ফোটার আগেই লাখ লাখ পুণ্যার্থী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নদীর তীরে জড়ো হতে থাকেন।
পদদলিত হওয়ার ঘটনার পর প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, স্ট্রেচারে করে মরদেহ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং লোকজন মাটিতে বসে আহাজারি করছে।
রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ঘটনাস্থলের দিকে বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স ছুটে যেতে তিনি দেখেছেন। কয়েকটি মৃতদেহও দেখেছেন তিনি।
কর্মকর্তারা বলেছেন, শুরুতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে একটি পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে তা অতটা গুরুতর ছিল না। ওই ঘটনার কারণ জানা যায়নি।
অবশ্য প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ওই পদদলিত হওয়ার ঘটনা থেকে বাঁচতে পুণ্যার্থীরা ছোটাছুটি করার সময় আরেকটি পদদলিতের ঘটনার সম্মুখীন হন। এরপর তাঁরা পন্টুন সেতুর দিকে ফিরে গিয়ে অন্য উপায় খোঁজার চেষ্টা করেন। তবে সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন, সেতু বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মুম্বাই থেকে কুম্ভমেলায় এসেছেন পুণ্যার্থী রাভিন। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি অনেক লোককে ভিড়ের মধ্যে পড়ে যেতে দেখেছি এবং তাদের ওপর দিয়ে অনেককে হেঁটে যেতে দেখেছি। অনেক শিশু ও নারী অসহায় হয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স নামের বিশেষ ইউনিট মোতায়েন করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলেছেন, উদ্ধার অভিযান চলছে।
বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে কথা বলেছেন। ‘অবিলম্বে সহায়তামূলক পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
উত্তর প্রদেশে দুই সপ্তাহ আগে থেকে মহাকুম্ভমেলা শুরু হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনই বিপুল মানুষের ভিড় জমে। গত দুই সপ্তাহে সেখানে প্রায় ১৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে।
কুম্ভমেলা উপলক্ষে প্রয়াগরাজে অস্থায়ীভাবে একটি শহর তৈরি করা হয়েছে। আজ বুধবার মহাকুম্ভমেলার পবিত্র স্নান নিতে রেকর্ড ১০ কোটি মানুষের সমাগম আশা করেছিল কর্তৃপক্ষ।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, তিন নদীর সঙ্গমস্থলে স্নান করলে তাঁরা পাপমুক্ত হবেন এবং জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পাবে। তিনটি নদী হলো গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী (পৌরাণিক অদৃশ্যমান নদী)।
তবে পদদলিত হওয়ার ঘটনার পর শাহি স্নানের অনুষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছে।
সন্ন্যাসিনী রবীন্দ্র পুরী বলেন, ‘আমাদের সকল সাধু-সন্ত যখন স্নানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই আমরা খবরটি পেলাম। সেই কারণে আমরা আমাদের স্নান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
২০১৩ সালেও কুম্ভমেলার সবচেয়ে পবিত্র দিনে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছিল। তখন ৩৬ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়। তাঁদের বেশির ভাগই নারী।