মোদিকে প্রশ্ন করায় সাবরিনাকে আক্রমণ, নিন্দায় হোয়াইট হাউস
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রশ্ন করার জন্য মার্কিন সাংবাদিককে হেনস্তার কড়া নিন্দা করল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। গত সোমবার হোয়াইট হাউস দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেয়, সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকিকে আক্রমণ করা হচ্ছে, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং ওই আচরণ গণতান্ত্রিক নীতিবিরোধী।
ভারতে গণতন্ত্রের অধোগমন, সংখ্যালঘু ও সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণের অভিযোগ মোদি সরকার বারবার খারিজ করে দিলেও সাবরিনা–কাণ্ড বুঝিয়ে দিল সেই দেশের প্রকৃত অবস্থা ঠিক কেমন। ওই সব অভিযোগ নিয়ে সাবরিনার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মোদি যা বলেছিলেন, তার সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির অমিল কতখানি, তা–ও দ্রুত প্রমাণিত। যার ফলে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘হয়রানির রিপোর্ট সম্পর্কে আমরা সব জানি। এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেকোনো দেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের হেনস্তার তীব্র নিন্দা আমরা করি।’
সাড়ে ৯ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে নরেন্দ্র মোদি কোনো সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে দেননি। শুধু সাংবাদিকই নন, এই সময়কালে সংসদেও কোনো সদস্য তাঁকে প্রশ্ন করতে পারেননি। কারও কোনো প্রশ্নের জবাবও দেননি।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসে সেই প্রথা ভেঙে যায়। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী মোদি দুটি প্রশ্নের জবাব দেন। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকির প্রশ্নটি ছিল, ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ ও মুসলমানদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত। সেই প্রশ্ন করার দরুন বিজেপির কর্তাসহ উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তীব্র ট্রোলের মুখে পড়তে হয় সাবরিনাকে। তাঁকে ‘পাকিস্তানি চক্রান্তকারী’ বলেও প্রতিপন্নের চেষ্টা করা হয়।
গত সোমবার হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ে এই প্রসঙ্গটিই তুলে ধরেন এনইসি নিউজের সাংবাদিক কেলি ওডোনিল। সাবরিনার হেনস্তাকারীদের মধ্যে রাজনীতিবিদেরাও রয়েছেন জানিয়ে তিনি এই বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া জানতে চান।
জন কিরবির মন্তব্যের পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কারিন জাঁ পিয়েরে বলেন, ‘জন কিরবি যা বলেছেন, তার সঙ্গে আমি জানাতে চাই আমরা গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে কারণেই গত সপ্তাহে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সাংবাদিকেরা তাঁদের কাজ করেন। যাঁরা তাঁদের ভয় দেখান বা হেনস্তা করেন, আমরা অবশ্যই তাঁদের সেই আচরণের নিন্দা করি।’
সাবরিনার প্রশ্নের জবাবে মোদি বলেছিলেন, গণতন্ত্র ভারতের মজ্জায়। গণতন্ত্র প্রতি ধনমিতে। ভারত গণতন্ত্রে বাঁচে। নিশ্বাস নেয়। সংবিধানেও তা লিপিবদ্ধ। তিনি বলেছিলেন, ভারতীয় গণতন্ত্রে বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। সরকারের সব কাজের সুফল ভোগ করেন জাত–ধর্মনির্বিশেষে সবাই।
ভারতের সেই গণতন্ত্রে মুক্তমনা সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে কোন অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমে সাবরিনার হেনস্তার মধ্য দিয়েই তা পরিষ্কার। শুধু সাবরিনাই নন, ভারতীয় গণতন্ত্রের অধোগমন ও সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। ওবামাকে আক্রমণ করছেন মোদির মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও বিজেপির নেতারা। সেই আক্রমণের নিন্দা প্রধানমন্ত্রী মোদি করেননি।