ভারতে ধর্মস্থান মামলায় পক্ষ হলো কংগ্রেস, কেন্দ্র এখনো নিরুত্তর

ভারতে ধর্মস্থান আইন মামলায় বিরোধী দল কংগ্রেস পক্ষ হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে চলমান ওই মামলায় পক্ষ হওয়ার আবেদনপত্র জমা দিয়ে কংগ্রেস ওই আইন বলবৎ রাখতে জোরালোভাবে দলের সমর্থনের কথা জানিয়েছে।

মামলায় পক্ষ হতে চেয়ে জমা দেওয়া আবেদনে সই করেছেন কংগ্রেস নেতা কে সি বেনুগোপাল। আবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষায় ওই আইন জরুরি। সেই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা করা হয়েছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। সেসব মামলার উদ্দেশ্য এযাবৎ চলে আসা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি নষ্ট করা।

কংগ্রেসের আবেদনে বলা হয়েছে, ওই আইনের কোনোরকম বিচ্যুতি ঘটলে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হবে। ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রসাতলে যাবে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও সংহতি বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।

অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক যখন তুঙ্গে, সেই সময় ১৯৯১ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের সরকার ধর্মস্থান আইন পাস করেছিল। সেই আইনে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের দিন দেশের ধর্মস্থান ও উপাসনালয়গুলোর অবস্থা যেমন ছিল, তেমনই থাকবে। কারও চরিত্র বদল করা যাবে না। ব্যতিক্রম একমাত্র অযোধ্যা, যেহেতু সেই বিতর্ক সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন ছিল।

বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বিভিন্ন ধর্মস্থানের দাবি জানিয়ে মামলা করতে থাকে। বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদ, মথুরার শাহি ঈদগাহ মসজিদ, সম্ভলের জামে মসজিদ, আজমির শরিফে সুফি সাধক মইনুদ্দিন চিশতির দরগাহসহ মুসলমানদের বহু উপাসনালয় হিন্দু মন্দিরের ওপর স্থাপিত দাবি জানাতে থাকে। ধর্মস্থানের প্রকৃত চরিত্র নির্ধারণে আদালতের নির্দেশে জরিপের আবেদনও জানানো হয়।

সেই দাবি অনুযায়ী, জ্ঞানবাপি মসজিদের জরিপের নির্দেশও নিম্ন আদালত দেন। মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় মামলাটি নিম্ন আদালতে ফেরত পাঠিয়ে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী ধর্মস্থানের চরিত্র বদল করা যাবে না, কিন্তু চরিত্র নির্ধারণ করা যাবে না, এমন বিধানও দেওয়া নেই।

ওই মনোভাবের পর গত বছর নিম্ন আদালত উত্তর প্রদেশের সম্ভলের জামে মসজিদের জরিপের নির্দেশ দেন। জরিপ করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। নিহত হন পাঁচজন। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না মূল বিবাদের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনোরকম নির্দেশ জারির ওপর স্থগিতাদেশ দেন। নতুন মামলা গ্রহণের ওপরও তিনি নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

কেন্দ্রীয় সরকার এ মামলায় তার অবস্থান এখনো ব্যাখ্যা করেনি। ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় প্রধান বিচারপতি থাকাকালে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে তার মনোভাব স্পষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাও কেন্দ্রকে তার অবস্থান চার সপ্তাহের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সময় উত্তীর্ণ হলেও কেন্দ্র এখনো নিরুত্তর।

ইতিমধ্যে কংগ্রেস এই মামলায় পক্ষ হয়েছে। সমাজবাদী পার্টিও পক্ষ হবে জানিয়েছে। জামায়াত উলেমা ই হিন্দ, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, মথুরার শাহি ঈদগাহ মসজিদ কমিটিসহ বিভিন্ন মুসলিম সংস্থা ও মানবাধিকার রক্ষা সংগঠন কেন্দ্রীয় আইন রক্ষার পক্ষে দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টে এ মামলায় পক্ষ হয়েছে।