বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা আদুরে প্রাণীগুলো সহজেই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। সুন্দর মুখ, মায়াবী চোখ ও মুখের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রথম দেখাতেই এদের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন অনেকেই। বিদায়ী বছরে নেট দুনিয়ায় এমন অনেক আদুরে প্রাণীর ছবি আর ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। এক প্রতিবেদনে বিশ্বের সেরা ১০ আদুরে প্রাণীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি সায়েন্স ফোকাস। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো:
ফেনেক শিয়ালের বসবাস উত্তর আফ্রিকার মরুভূমিতে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রজাতির শিয়াল। এদের সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বড় আকৃতির চমৎকার কান। ছোটখাটো শরীরে বেঢপ আকারের কান শিয়ালটিকে বেশি আদুরে করে তুলেছে।
ফেনেক শিয়াল বালুর গভীরে গর্ত খুঁড়ে বাস করে এবং দিনের তাপমাত্রা থেকে নিজেদের রক্ষায় শুধু রাতে বের হয়। এ ক্ষেত্রে এদের বড় কানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাপ বিকিরণ করে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে দেখা মেলে অ্যাডলি পেঙ্গুইনের। আদুরে হলেও সব প্রজাতির পেঙ্গুইনের মধ্যে এটি অন্যতম হিংস্র শিকারিও বটে। এ ছাড়া এরা চমৎকার সাঁতারু। শিকার করার সময় প্রতি ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার বেগে পানির মধ্য দিয়ে যেতে পারে এ পেঙ্গুইন।
ফরাসি অ্যান্টার্কটিক অনুসন্ধানী জুলস ডুমন্ট ডি’উরভিল এ প্রজাতির পেঙ্গুইন আবিষ্কার করেন এবং তাঁর স্ত্রী অ্যাডলির নামে এদের নামকরণ করেন।
সবচেয়ে ছোট প্রজাতির এ বিড়াল বিশ্বের সবচেয়ে আদুরে প্রাণীগুলোর একটি। বিড়ালটিকে আটকে রাখা খুব কঠিন। এ প্রজাতির বিড়ালের গড় ওজন প্রায় ১ কেজি হয়ে থাকে। এগুলো ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বেশির ভাগ গৃহপালিত বিড়ালের চেয়ে আকারে ছোট হয় এরা। এ প্রজাতির বিড়ালের দেখা পাওয়া বেশ কঠিন। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের ছোট ঘন বনাঞ্চলে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে এরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এদের সংখ্যা অনেক কমেছে।
জায়ান্ট পান্ডা পাওয়া যায় মধ্য চীনে। প্রাণীটিকে সফল বন্য প্রাণী সংরক্ষণ প্রচেষ্টার সমার্থক হিসেবে ধরা হয়। বিশালাকৃতির আদুরে শরীর ও আনাড়ি স্বভাবের কারণে যে কেউ এদের প্রতি আকৃষ্ট হতে বাধ্য। ভালুক হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হলেও এসব পান্ডার প্রাথমিক খাদ্য বাঁশ। এরা দিনে ৩৫ কেজির বেশি বাঁশ খেতে পারে। গাছে চড়ার ক্ষেত্রে এরা বেশ দক্ষ।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে অবস্থিত রটনেস্ট দ্বীপেই শুধু এ প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। ইঁদুরের মতো দেখতে হলেও কোওক্কা ক্যাঙারুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। নিশাচর এ আদুরে প্রাণী ক্যাঙারুর মতো পেটের নিচে থাকা থলিতে শাবক বহন করে। এদের আকার গৃহপালিত বিড়ালের মতো। পাতা খেতে গাছে চড়ার দুর্দান্ত সক্ষমতা রয়েছে কোওক্কার।
বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাব ও সব সময় হাসির মতো মুখভঙ্গির কারণে এ প্রাণী বিশ্বের সবচেয়ে সুখী চেহারার প্রাণী হিসেবেও পরিচিত।
গ্যালাগো নামের প্রাণীটি (মানবশিশুর মতো কান্নার কারণে) ঝোপের শিশু নামে পরিচিত। সর্বভুক এ প্রাণী ফল ও পোকামাকড় খায়। এরা গাছেই বেশির ভাগ সময় কাটায়। বড় চোখের কারণে এদের দেখতে বেশ আদুরে লাগে। এরা অন্ধকারেও দেখতে পায়। কান দিয়ে শিকারের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে গ্যালাগো। এক লাফে পাঁচ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে এটি।
সুগার গ্লাইডার ক্যাঙারু শ্রেণিভুক্ত একটি প্রাণী। ছোট প্রাণী হিসেবে উড়ে দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে এটি। রস ও ফুলের মধুর মতো মিষ্টি খাবার খেতে পছন্দ করে এরা। বিপদ এড়াতে মাটি থেকে ওপরে গাছের ডালে থাকতে পছন্দ করে। বড় চোখের কারণে এরা দেখতে বেশ আদুরে। এ ছাড়া বড় চোখ নিশাচর প্রাণীটিকে কম আলোয় দেখতেও সহায়তা করে। সুগার গ্লাইডার সামাজিক প্রাণী। এরা প্রায় ৪০ জন দল বেঁধে থাকে।
নাম পান্ডা হলেও জায়ান্ট পান্ডার সঙ্গে এটির কোনো সম্পর্ক নেই; যদিও জায়ান্ট পান্ডার মতোই আদুরে লাল পান্ডা। জায়ান্ট পান্ডার ৫০ বছর আগে লাল পান্ডা আবিষ্কৃত হয়েছিল। লাল রঙের লোমশ লেজ ও মিষ্টি মুখের কারণে এ প্রাণী দেখতে টেডি বিয়ারের মতো। তবে প্রাথমিকভাবে নিশাচর হওয়ার কারণে এদের দেখা পাওয়া ভার। লাল পান্ডা এশিয়ার পাহাড়ি এলাকায় বাস করে। এরা গাছে লুকিয়ে থাকে এবং জীবনের অর্ধেক সময় ঘুমিয়ে কাটায়। এদের প্রধান খাদ্য বাঁশ। তবে এরা ফল, বাদাম, ডিমসহ অন্যান্য খাবারও খায়।
আদুরে প্রাণীদের এ তালিকায় বেশির ভাগই পশমযুক্ত স্তন্যপায়ী। তবে এর বাইরেও উভচর একটি প্রাণী আছে, যাকে এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় না। এটির নাম এক্সোলোটল। স্থলভাগে থাকতে পারলেও বেশির ভাগ সময় এরা পানির নিচে কাটায়। এদের রয়েছে সুন্দর চোখ, পালকযুক্ত ফুলকা ও ঈষৎ হাসির মতো মুখাবয়ব। এরা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুনর্গঠন করতে সক্ষম।
পিকা নামের ছোট প্রাণীটি খরগোশের আত্মীয় শ্রেণির। উত্তর আমেরিকার পাথুরে পাহাড়ে এদের বসবাস। তুলতুলে শরীর ও গোলাকার মুখের কারণে এরা নিঃসন্দেহে আদুরে। কিছু কঠোর পরিশ্রমী পিকা খাবার সংগ্রহ করে, আর কিছু অন্যদের খাবার চুরি করে জীবন নির্বাহ করে।