অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় রক্ত জমাট বাঁধার প্রমাণ নেই: ইএমএ

ছবি: রয়টার্স

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার কারণে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ)। সংস্থাটি বলেছে, টিকার সম্ভাব্য ঝুঁকির তুলনায় এর কার্যকারিতা অনেক বেশি। স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কায় ইউরোপ ও ইউরোপের বাইরে বেশ কয়েকটি দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ব্যবহার স্থগিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা জানাল ইএমএ। খবর এএফপির।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইএমএর বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার টিকা নিয়ে বৈঠকে বসেন। ইউরোপীয় সংস্থাগুলো আগামীকাল বৃহস্পতিবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশ করতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বড় তিন দেশ জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্স বলেছে, ইএমএর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানার পর তারা টিকাদান কর্মসূচি শুরু করবে। ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি বলেছে, এই দেশগুলোতে টিকার ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া উচিত।

ইএমএর প্রধান এমার কুক স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। টিকা নেওয়ার পর করোনায় সংক্রমিত হলেও হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া বা মৃত্যুর ঝুঁকি কমে। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকির চেয়ে এসব উপকারিতার গুরুত্ব অনেক বেশি।

কুক বলেন, ইএমএ টিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিকূল সব ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখছে। ফ্রান্স ও ইতালি ইএমইর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ইএমএর প্রাথমিক বিবৃতি উৎসাহব্যঞ্জক।

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জেন কাসটেক্স বলেছেন, ইউরোপীয় ওষুধ সংস্থা নিরাপদ বললে জনগণের আস্থা বাড়াতে তিনি শিগগিরই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেবেন। বিএফএম টিভিতে লাইভ সাক্ষাৎকারে কাসটেক্স বলেন, প্যারিসে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে। নিস ও ক্যালাইস এলাকায় এর মধ্যেই সপ্তাহব্যাপী লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। বিএফএম টিভিতে দেওয়া এক লাইভ সাক্ষাৎকারে কাসটেক্স বলেন, ‘আমরা উদ্বেগজনক ও জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি।’

যুক্তরাজ্যে এক কোটির বেশি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। দেশটির বিশেষজ্ঞরা যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো প্রমাণ পাননি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দ্য টাইমস পত্রিকায় লিখেছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিরাপদ ও ভালোভাবে কার্যকর।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন ও ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ফার্মাকোপিডমাইয়োলজির অধ্যাপক স্টিফেন ইভানস বলেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার কারণে কয়েকজনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে। তবে করোনার টিকা নেওয়ার জন্য এমনটা ঘটেনি। তিনি বলেছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় খুব কম ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও সে তুলনায় এর কার্যকারিতা অনেক বেশি।

দামে তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় দরিদ্র দেশগুলোতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বেশি পছন্দের। তবে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ইউরোপ ও ইউরোপের বাইরেও প্রভাব ফেলেছে। ইন্দোনেশিয়া, ভেনেজুয়েলা, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডসে টিকাদান সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।

তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সে দেশের নাগরিকদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির বিজ্ঞানভিত্তিক একটি কমিটি ৬৫ বা তার বেশি বছরের নাগরিকদেরও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ জানিয়েছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রিয়ুথ চ্যান ওচা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন।