যে কারণে যুক্তরাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের আভাস
যুক্তরাজ্যের আলোচিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোট দিলেন দেশটির নাগরিকেরা। এবারের নির্বাচনে কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসতে পারে। আর ক্ষমতায় ১৪ বছরের উত্তাল সময় পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি অনেকটাই অস্তিত্ব–সংকটে পড়ে যেতে পারে।
ভোটের আগে একাধিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, কিয়ার স্টারমারের মধ্য বাম দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে রয়েছে। দলটি প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের চেয়ে ২০ শতাংশ এগিয়ে।
জনমত জরিপ অনুযায়ী, অনেক ভোটার কনজারভেটিভ দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও গোলযোগের কারণে পরিবর্তন দেখতে চাচ্ছেন। কারণ, দলটির মধ্য থেকে গত আট বছরে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাজ্যবাসীর চাওয়া পূরণ করতে পারেননি কেউ। এর অর্থ, সাবেক মানবাধিকার আইনজীবী ৬১ বছর বয়সী স্টারমার ব্রিটিশ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় করণীয় তালিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে বসবেন। কিন্তু হঠাৎ করে জনগণের অনুভূতিতে পাওয়া সমর্থন ও তা পূরণ করার জন্য আর্থিক সংস্থান ছাড়াই তিনি এ দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।
গতকাল এক বিবৃতিতে স্টারমার বলেন, ‘আজ ব্রিটেন এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে। আমরা কনজারভেটিভদের অধীনে আরও পাঁচটি বছর পার করার সামর্থ্য রাখি না। আপনারা যদি লেবার দলকে ভোট দেন, তবে শুধু পরিবর্তন ঘটতে পারে।’
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে একটানা রাত ১০টা পর্যন্ত। অনেক ভোটার পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন। কনজারভেটিভ নেতা ঋষি সুনাক তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তিকে নিয়ে উত্তর ইংল্যান্ডের রিচমন্ড জেলায় নিজ আসনে সকাল সকাল ভোট দেন। স্টারমার তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে উত্তর লন্ডনের নিজ আসনে সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভোট দেন।
নিজস্ব কর পরিকল্পনা নিয়ে অসন্তোষের জেরে মাত্র ৪৯ দিনের প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষে লিজ ট্রাসের স্থলে সুনাককে ক্ষমতায় বসান কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতারা। সেটি ছিল ২০২২ সালের অক্টোবরের ঘটনা। পরে দেশের টালমাটাল অর্থনীতিতে একদিক থেকে স্থিতিশীলতা আনতেও সক্ষম হন ৪৪ বছর বয়সী ধনাঢ্য সুনাক। তবে দলের অভ্যন্তরে চলা তিক্ত বিবাদের অবসান ঘটানো কিংবা বিরোধী লেবার পার্টির প্রতি দেশবাসীর অব্যাহত সমর্থনে লাগাম টানতে ব্যর্থ হন।
কিছু অর্থনৈতিক সুখবরে ক্ষমতাসীন দল যখন তাদের আশা টিকিয়ে রাখার ভেলা খুঁজে পাচ্ছিল, ঠিক তখন, গত মে মাসের শেষ দিকে সুনাক ৪ জুলাই আগাম নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। অথচ ২০২৫ সালের প্রথম দিকের আগে তাঁকে ভোটারদের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল না। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর কনজারভেটিভ দলকে ভোট দিয়ে জেতানোর জন্য প্রচার করেননি সুনাক। এর পরিবর্তে লেবার পার্টি পার্লামেন্টে এলে কী ধরনের বিপদ হতে পারে, তা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তিনি অভিযোগ করেন, লেবার পার্টি কর বৃদ্ধি করবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করবে এবং ভূরাজনৈতিক উদ্বেগের এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যকে আরও ঝুঁকিতে ফেলে দেবে। তবে লেবার পার্টি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত বৃহস্পতিবার ভোটারদের উদ্দেশে সুনাক বলেন, ‘লেবার পার্টি আমাদের দেশের ও অর্থনীতির সর্বনাশ করবে। সর্বশেষ তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, সেটাই করেছিল। তা হতে দেবেন না।’
রাতে ভোট গ্রহণ শেষে বুথফেরত জরিপ আসার কথা। এ জরিপেই ভোটের ফলাফল অনেকটাই জানা যাবে। তবে এ ভোটের ফল আজ শুক্রবার সকালেই জানা যেতে পারে।
পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি স্টারমারের
স্কটল্যান্ডে লেবার পার্টির ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি থেকে উপকৃত হতে পারেন স্টারমার। সম্প্রতি স্কটল্যান্ডে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি তহবিল কেলেঙ্কারি নিয়ে ফেঁসে গেছে। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর স্টারমারকে ডাউনিং স্ট্রিটে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে। ভোটের আগে তিনি এক শব্দের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার করেছেন। তা হচ্ছে—পরিবর্তন। জনগণের জন্য সরকারি সেবার মান কমে যাওয়া ও জীবনযাত্রার মান নিয়ে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। বলেছেন, লেবার পার্টি পরিবর্তন আনবে। কিন্তু যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন, তা থেকে শিগগিরই উত্তোলনের কোনো জাদুমন্ত্র তাঁর কাছে নেই। দেশটিতে ইতিমধ্যে ১৯৪৯ সালের পর জনগণকে সবচেয়ে বেশি করের বোঝা চাপানো হয়েছে। এ ছাড়া নিট ঋণ প্রায় বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনের সমতুল্য। স্টারমার অবশ্য বারবার সতর্ক করে বলে এসেছেন, তিনি রাতারাতি সবকিছু ঠিক করে ফেলতে পারবেন না। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁর দল আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ পাওয়ার দিকে মনোযোগ দেবে।
অন্যদিকে সুনাকের যুক্তি, তাঁর মাত্র ২০ মাসের ক্ষমতায় থাকার সময়েই দেশের অর্থনীতি উন্নতির পথে ধরেছিল। লেবার দলকে ওই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।