পশ্চিমাদের একক আধিপত্যের দিন শেষ হচ্ছে: পুতিন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব সবচেয়ে বিপজ্জনক দশকের মুখোমুখি বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর মতে, বিশ্বমোড়ল হিসেবে পশ্চিমাদের একক অধিপত্যের দিন শেষের পথে। গড়ে উঠছে নতুন একটি বিশ্বব্যবস্থা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়াভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভালদাই ডিসকাশন ক্লাবে বৃহস্পতিবার দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে রাশিয়া যে ভুল কিছু করেনি, তা পুরো বক্তব্যেই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার চাপে বলতে গেলে একঘরে হয়ে পড়েছে ক্রেমলিন।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা রাশিয়াকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে অভিযোগ করে পুতিন বলেন, বিশ্বব্যবস্থার নেতৃত্বে থাকার ‘মরিয়া চেষ্টা’ চালাচ্ছে পশ্চিমারা। তবে এই সক্ষমতা তাদের আর নেই। পুতিনের ভাষায়, ‘ভবিষ্যতের নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনেই গড়ে উঠছে।’
রাজধানী মস্কোয় দেওয়া ওই বক্তব্যে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, রাশিয়ার মিত্রদের মস্কোবিমুখ করতে চাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। এক্ষেত্রে সফলতা পেতে তারা পারমাণবিক হামলার ধোঁয়া তুলে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করছে।
পুতিন অবশ্য সম্প্রতি বলেছিলেন, রাশিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়লে প্রয়োজনে তাদের হাতে থাকা ‘সব কিছু’ ব্যবহার করা হবে। বিশ্লেষকদের অনেকের ভাষ্যমতে, এর মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। আর সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছিলেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। ক্রেমলিনের এসব বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা।
সম্প্রতি মস্কো থেকে দাবি তোলা হয়েছিল, যুদ্ধক্ষেত্রে ‘ডার্টি বোমা’ ব্যবহার করতে পারে ইউক্রেন। ডার্টি বোমায় ইউরেনিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় উপাদান থাকে। সাধারণ বোমার মতো দেখতে এই বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হলে তেজস্ক্রিয় উপদান বাতাসে ছড়িয়ে আক্রান্তদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
রাশিয়ার ওই দাবির নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। ন্যাটোপ্রধান ইয়ানেস স্টলটেনবার্গ ইউক্রেনের ডার্টি বোমা ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে রাশিয়ার দাবি উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, উত্তেজনা বাড়াতে মস্কোর এ ধরনের দাবি করা কোনোমতেই উচিত হয়নি।
পুতিন তাঁর দৃষ্টিতে বিশ্বকে যেভাবে দেখেন, সেটাই আজকের ভাষণে উঠে এসেছে। তাঁর দৃষ্টিতে কোনো কিছুতেই রাশিয়ার দোষ নেই। আর ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিশ্বে খাদ্য সংকট-সব কিছুর জন্য দায়ী পশ্চিমারা।
বৃহস্পতিবারের ভাষণের আগের দিন বুধবার রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দায়িত্বে থাকা বাহিনীর মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন পুতিন। শত্রুপক্ষ বড় আকারে পারমাণবিক হামলা চালালে রাশিয়া কীভাবে একই ধরনের জবাব দেবে, তা নিয়ে ওই মহড়া চালানো হয়। এ সময় উপস্থিত ব্যক্তিদের উদ্দেশে পুতিন বলেন, ‘যতদিন পারমাণবিক অস্ত্র আছে, ততদিন সেগুলো ব্যবহার হওয়ার বিপদ থেকেই যায়।’
বৃহস্পতিবারের ভাষণেও আগের সুরে পশ্চিমাদের ওপর আক্রমণ করেন পুতিন। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে ‘বিপজ্জনক, রক্তক্ষয়ী ও নোংরা’ খেলা খেলছে পশ্চিমারা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের অধিপত্যের দিন শেষ হয়ে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হয়তো সবচেয়ে বিপজ্জনক, অনিশ্চিত এবং একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দশক দেখতে যাচ্ছে বিশ্ব।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা রাশিয়াকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে অভিযোগ করে পুতিন বলেন, বিশ্বব্যবস্থার নেতৃত্বে থাকার ‘মরিয়া চেষ্টা’ চালাচ্ছে পশ্চিমারা। তবে এই সক্ষমতা তাদের আর নেই। পুতিনের ভাষায়, ‘ভবিষ্যতের নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনেই গড়ে উঠছে।’
পুতিনের ভাষণের সমালোচনা করে বিবিসির রাশিয়া বিষয়ক সম্পাদক স্টিভ রসেনবার্গ বলেন, পুতিন দাবি করেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তবে সেই ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি একের পর এক ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধে সব সব ধরনের অস্ত্র ব্যবহারে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া।
চলমান যুদ্ধের জন্য পুতিনের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই—উল্লেখ করে স্টিভ রসেনবার্গ বলেন, ‘পুতিন তাঁর দৃষ্টিতে বিশ্বকে যেভাবে দেখেন, তাই আজকের ভাষণে উঠে এসেছে। তাঁর দৃষ্টিতে কোনো কিছুতেই রাশিয়ার দোষ নেই। আর ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিশ্বে খাদ্য সংকট—সব কিছুর জন্য দায়ী পশ্চিমারা।’