অমিক্রন ঢেউ মৃদু, তবু থেকে যাচ্ছে উদ্বেগ

যুক্তরাজ্যে একদিনে এক লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
ছবি : রয়টার্স

যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রকাশিত প্রাথমিক গবেষণা অনুসারে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রনের ঢেউ মৃদু বলেই মনে হচ্ছে। করোনার অন্য ধরনের তুলনায় অমিক্রনে সংক্রমিত কম লোকের হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার হার ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কম দেখা গেছে। তবে, অমিক্রন মৃদু হলেও এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে। দ্রুত সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো একদিনে এক লাখ লোকের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অমিক্রনের তীব্রতা সম্পর্কে আরও বেশি জানা গেলে তা দেশগুলোকে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।

স্কটল্যান্ডের গবেষণায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা গণনা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, করোনা ডেলটা ধরনের মতোই আচরণ করেছে অমিক্রন। তারা আশা করেছিল ৪৭ ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৫ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হয়েছে।

গবেষকেরা বলেছেন, হাসপাতালের রোগী ভর্তির প্রয়োজনীয়তা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমতে দেখেছেন তাঁরা। তবে এ গবেষণায় ঝুঁকিপূর্ণ বয়স্ক লোকের সংখ্যা ছিল অনেক কম।

স্কটল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জিম ম্যাকমেনামিন একে দারুণ সুসংবাদ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে একটি শূন্যস্থান পূরণ করা গেছে। তবে এ নিয়ে সতর্ক থাকতেও বলেছেন ম্যাকমেনামিন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, অবিশ্বাস্যভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অমিক্রন ধরন। তাই করোনার সংক্রমিত রোগী বেড়ে গেলে এটি মৃদু হওয়ার যে সুবিধা তা নাও মিলতে পারে।

স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক উলহাউস বলেন, ‘একটি পৃথক সংক্রমণ বিপুল মানুষের জন্য তুলনামূলকভাবে মৃদু হতে পারে কিন্তু একবারে সবাই একসঙ্গে অসুস্থ হয়ে গেলে তা জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে।’

এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার আরেকটি গবেষণায় অমিক্রন ঢেউকে মৃদু হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অমিক্রনে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কম।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়তে দেখা গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে যে আভাস মিলেছে, তাতে বলা যায়, করোনার আগের ঢেউয়ের তুলনায় নতুন এ ঢেউয়ে মৃত্যুহার কম। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনার ডেলটা ধরনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তুলনায় অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থ হতে দেখা গেছে। যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কিংবা যাঁরা বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছেন, দুই পক্ষই অমিক্রন থেকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেসের অধ্যাপক চেরিল কোহেন বলেছেন, ‘করোনা অন্য ধরনের তুলনায় অমিক্রনের তীব্রতা হ্রাসের একটি ইতিবাচক গল্প জানতে পারছি আমরা।’

অমিক্রন কেন মৃদু?

অমিক্রন ধরনটির তীব্রতা কম হওয়ার কারণকে এর মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলোর সংমিশ্রণ বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি টিকা এবং পূর্ববর্তী সংক্রমণ থেকে যে ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে সে কারণেও এটি তীব্র হয়ে উঠতে পারেনি।

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, অমিক্রনের মিউটেশন বা প্রতিরূপ তৈরির পরে এটি ডেলটার চেয়ে মৃদু হয়ে যায়।

এর বাইরে একাধিক পরীক্ষাগারের গবেষণাতেও অমিক্রন মৃদু হওয়ার সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরা হয়েছে। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, অমিক্রন শ্বাসনালিতে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি পারঙ্গম। কিন্তু এটি ফুসফুসের টিস্যুতে যাওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি পারঙ্গম নয়। ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ দেখেছে যে, অমিক্রন ফুসফুসের কোষগুলোকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে পারঙ্গম নয়।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা শিগগিরই অমিক্রন নিয়ে তথ্য প্রকাশ করবে। তা থেকে অমিক্রনের তীব্রতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।