রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাচ্ছে ইউক্রেন
পাইলটদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরপরই ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস থেকে এ যুদ্ধবিমান পাবে ইউক্রেন।
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে ইউক্রেন। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। ইউক্রেনের পাইলটদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরপরই ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস থেকে এ যুদ্ধবিমান পাবে কিয়েভ। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
আকাশপথে রাশিয়ার আধিপত্য ঠেকাতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে ব্যাপক দেনদরবার করে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। অবশেষে অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে কিয়েভ।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে যুদ্ধবিমান পাঠানোর অনুরোধ অনুমোদনের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। চিঠির একটি অনুলিপি দেখার সুযোগ পেয়েছে রয়টার্স। চিঠিতে ব্লিঙ্কেন লিখেছেন, ‘ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ এবং যোগ্য এফ-১৬ প্রশিক্ষক দিয়ে ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানাতে আমি লিখছি।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে নেদারল্যান্ডস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওপকে হোয়েক্সট্রা বলেছেন, ‘ইউক্রেনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠানোর পথ সুগম করতে ওয়াশিংটনের নেওয়া সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এখন আমাদের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমরা পরবর্তী আলোচনা করব।’
ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছে ডেনমার্কও। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জ্যাকব এলেমান-জেনসেন গতকাল শুক্রবার স্থানীয় একটি বার্তা সংস্থাকে বলেন, ‘পাইলটদের প্রশিক্ষণের পর যুদ্ধবিমান প্রদান করাটা পরবর্তী স্বাভাবিক পদক্ষেপ। আমরা ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি শিগগিরই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারব।’
পাইলটদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি লোকবল দিয়ে সহযোগিতা, যুদ্ধবিমান রক্ষণাবেক্ষণ এবং শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে সহযোগিতার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়ে আসছে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস।
গতকাল ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডেনমার্কে চলতি মাসের শেষের দিকে ইউক্রেনের পাইলটদের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করবে ১১টি দেশের একটি জোট। এর আগে গত জুলাইতে ডেনমার্কের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রোয়েলস পোলসেন বলেছিলেন, ২০২৪ সালের শুরুতে এই প্রশিক্ষণের ‘ফলাফল’ দেখতে পাবেন বলে তিনি আশা করছেন।
এর আগে মে মাসে ইউক্রেনের পাইলটদের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অনুমোদন দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ জন্য ডেনমার্ক ছাড়াও রোমানিয়ায় একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র খোলা হয়েছে। যদিও ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহনাত গত বুধবার দেশটির একটি টেলিভিশনকে বলেছেন, আসন্ন শরৎ ও শীতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হাতে পাচ্ছে না কিয়েভ। মার্কিন কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন, চলমান পাল্টা আক্রমণে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে তেমন কোনো সাহায্য পাবে না ইউক্রেন।
মস্কোতে ড্রোন হামলা
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে গতকাল আবারও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। ড্রোনটি একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। রাশিয়া বলেছে, তারা গুলি করে ড্রোনটি বিধ্বস্ত করেছে। এ ঘটনায় মস্কোর বেসামরিক সব বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
মস্কোর চারটি প্রধান বিমানবন্দর ভুনোকোভো, দোমোদেদোভো, শেরেমেত্রিয়েভো ও ঝুকভস্কিতে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে পরে উড়োজাহাজ চলাচল আবার চালু হয়েছে। রাশিয়ার বিমান পরিবহন সংস্থা বলেছে, সাতটি ফ্লাইট বিকল্প বিমানবন্দর দিয়ে চলাচল করেছে।
মে মাসের শুরুতে ক্রেমলিনে ড্রোন বিধ্বস্ত করার পর থেকে রাশিয়ার ভেতরে ড্রোন হামলা বেড়েছে। পরোক্ষভাবে এসব হামলার ইঙ্গিত দিলেও ইউক্রেন এখন পর্যন্ত সরাসরি দায় স্বীকার করছে না।
কৃষ্ণসাগরে হামলার চেষ্টা
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষ্ণসাগরে সামুদ্রিক ড্রোন দিয়ে দুটি টহল জাহাজে ইউক্রেনের একটি হামলার প্রচেষ্টা প্রতিহত করার দাবি করেছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতের শেষ দিকে ‘মনুষ্যবিহীন গানবোট’ দিয়ে ওই দুটি জাহাজে হামলার চেষ্টা চালানো হয়। তবে পাল্টা গুলি চালিয়ে জাহাজের কাছে আসার আগেই সামুদ্রিক ড্রোনটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়।