যে গ্রামে নারীদের কথায় সব চলে
‘এখানে নারীদের কথায় সব চলে’—কারাপাথোস দ্বীপের প্রত্যন্ত গ্রামটির গুণগান গেয়ে এভাবেই কথাটি বললেন রিগোপোলা পাবলিদিস। এখানে বসবাস গ্রিসের বিরল মাতৃতান্ত্রিক সম্প্রদায়গুলোর একটি।
পাশেই একটি চেয়ারে বসে ধর্মীয় প্রতিকৃতি আঁকছিলেন পাবলিদিসের স্বামী জিয়ান্নিস। মাথা নেড়ে স্ত্রীর কথায় সায় দিলেন তিনি।
নিজের প্রতিষ্ঠানে বসে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে বুটি তুলছিলেন পাবলিদিস। হাসতে হাসতে তিনি বললেন, ‘আমাকে ছাড়া কিছুই করতে পারেন না আমার স্বামী। এমনকি নিজের ট্যাক্স রিটার্নও জমা দিতে পারেন না।’
গ্রিসের বড় অংশই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। এর বিপরীতে অলিম্পোস গ্রামটিতে সবকিছুরই নেতৃত্বে রয়েছেন নারীরা।
অন্যান্য দোদেকানিজ দ্বীপগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন দর্শনীয় এই পাহাড়ি গ্রামটি নিজেদের কয়েক শতকের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ষোড়শ শতকের ওসমানি সাম্রাজ্য এবং বিংশ শতাব্দীতে ইতালীয় শাসনের মধ্যেও নিজেদের ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে আছে এখানকার বাসিন্দারা। অলিম্পোসে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কোনো পিচঢালা সড়ক ছিল না।
স্থানীয় ইতিহাসবিদ জিওরগোস সাম্পানাকিস বলেন, বাইজান্টাইন যুগের ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে এখনো কিছু টিকে আছে। সেগুলোর একটি হলো, উত্তরাধিকার ব্যবস্থায় মায়েদের সম্পত্তি পান বড় মেয়ে।
পেশায় দরজি পাবলিদিসও এই উত্তরাধিকার ব্যবস্থার সুবিধাভোগী। তিনি মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ৭০০ জলপাইগাছ পেয়েছেন।
পাবলিদিস বলেন, ‘পরিবারের সব সন্তানের মধ্যে ভাগ করার মতো পর্যাপ্ত সম্পত্তি ছিল না। আর আমরা যদি উত্তরাধিকার পুরুষদের কাছে রেখে দিতাম, তবে তারা তা নষ্ট করত।’
গ্রিসে প্রথা অনুযায়ী বিয়ের পর মেয়েরা স্বামীর বাড়িতে ওঠেন। তবে অলিম্পোসে সেটা উল্টো। বিয়ের পর স্বামীকে স্ত্রীর বাড়িতে থাকতে হয়।
নামের ক্ষেত্রেও মাতৃতান্ত্রিক প্রথার বিষয়টি লক্ষ করা যায়। সাম্পানাকিস বলেন, ‘বড় মেয়ে নানির নামের প্রথম অংশ নিজের নামের সঙ্গে ব্যবহার করে থাকে। যদিও গ্রিসের অন্যত্র দাদার নামের প্রথম অংশ ব্যবহার করতে দেখা যায়।’ তিনি বলেন, ‘এখনো অনেক নারী নিজের মায়ের বংশ পদবি ব্যবহার করেন, স্বামীর নয়।’
অলিম্পোসে নারীদের ক্ষমতায়ন ১৯৫০-এর দশকে আরও বাড়ে, যখন পুরুষেরা কাজের জন্য বিদেশ যেতে থাকেন। তাঁদের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে যায়। এতে পরিবার ও প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্ব পড়ে স্ত্রী ও কন্যাদের ওপর।