ভাগনার বিদ্রোহের পর এবার রাশিয়ায় আক্রমণ করতে চায় পুতিনবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী
ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন গত মাসে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মস্কো অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। এ ঘটনা রুশ সরকারকে বড় চাপের মুখে ফেলেছিল। এবার রাশিয়ার ভেতরে আক্রমণের পরিকল্পনার কথা বলেছে ফ্রিডম অব রাশিয়া লিজন নামে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনবিরোধী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
ফ্রিডম অব রাশিয়া লিজনের কমান্ডার সিজারের সাক্ষাৎকার নিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অবজারভার। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আগামী মাসে বা এর পরে চমকপ্রদ কিছু আসছে। এটা হবে আমাদের তৃতীয় অভিযান। এরপর আমরা চতুর্থ ও পঞ্চম অভিযান চালাব। আমাদের অনেক বড় পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা আমাদের সব অঞ্চল মুক্ত করতে চাই।’
ফ্রিডম অব রাশিয়া লিজনে প্রায় ২০০ সদস্য রয়েছেন। তাঁরা একসময় রুশ সামরিক বাহিনীতে কাজ করতেন। গত মে ও জুন মাসে তাঁরা রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছেন। দখলে নিয়েছেন বেলগোরোদ শহরের কাছে সীমান্ত–সংলগ্ন কয়েকটি গ্রাম। সেখানে রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন তাঁরা। তখন ১০ জন রুশ সেনাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন সিজার।
সিজারের প্রকৃত নাম ম্যাক্সিমিলিয়ান আন্দ্রোনিকভ। একসময় রাশিয়ার সোচি ও সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে শরীরচর্চার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এ সময় রাশিয়া থেকে ইউক্রেনে চলে যান সিজার। সে বছরের মার্চে গড়ে তোলা হয় ফ্রিডম অব রাশিয়া লিজন।
৪৯ বছর বয়সী সিজার রাশিয়ায় কম সমালোচিত নন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তাঁকে একজন চরমপন্থী ও নাৎসি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে তাঁর বিচার চলছে। আর ফ্রিডম অব রাশিয়া লিজন নিয়ে সমালোচকদের ভাষ্য, এই বাহিনীকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছেন ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান কিরিলো বুদানভ।
সিজার জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সহায়তার কাজ করছে তাঁর বাহিনী। তবে রাশিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশের পর তাঁরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। ফ্রিডম অব রাশিয়া লিজনের সাঁজোয়া যানগুলো নিয়ে সিজারের ভাষ্য, সেগুলোর বেশির ভাগই ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া।
ফ্রিডম অব রাশিয়া লিজনের যোদ্ধারা ব্যাপকহারে হতাহতের শিকার হচ্ছেন—ক্রেমলিনের এমন দাবিকে অতিরঞ্জিত দাবি করে সিজার বলেন, ‘রুশ সেনারা মরদেহগুলোকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর উর্দি পরাচ্ছে। তারপর সেগুলো টেলিভিশনে দেখাচ্ছে। আমাদের উর্দিগুলো দেখতে আলাদা। রাশিয়া যা বলছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা।’
তবে শুধু ফ্রিডম অব রাশিয়া লিজনই নয়, রাশিয়ান ভলানটিয়ার কর্পস নামের আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দুটি বাহিনীরই কট্টর ডানপন্থী নানা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সিজার নিজেও রাশিয়ান ইম্পেরিয়াল মুভমেন্ট (আরআইএম) নামের একটি কট্টর ডানপন্থী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছিলেন। এই বাহিনী প্রকাশ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করতেন।
অবজারভারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিজার বলেন, তিনি যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ও মার্গারেট থ্যাচারকে ভক্তির চোখে দেখেন। তাঁর বাহিনীতে ডান ও বামপন্থী মতাদর্শের যোদ্ধা রয়েছেন। এ ছাড়া রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির সমর্থকেরাও রয়েছেন। নাভালনির ওপর বিষপ্রয়োগ করেছিল রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি। বর্তমানে তিনি কারাগারে বন্দী।
গত মাসে ভাগনারপ্রধান প্রিগোশিনের বিদ্রোহ পুতিনকে দুর্বল করে দিয়েছে বলে মনে করেন সিজার। তিনি বলেন, প্রিগোশিন যখন বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন, তখন তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে আটকের পর পদচ্যুত করা।
সিজার বলেন, প্রিগোশিনের ওই উদ্দেশ্য জানতে পেরেছিল এফএসবি। এর পরপরই তারা দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্তভ–অন–দন শহর থেকে শোইগু ও গেরাসিমভকে সরিয়ে নেয়। পরে শহরটি দখলে নেন ভাগনার যোদ্ধারা। সেখান থেকে মস্কোর উদ্দেশে ভাগনার যোদ্ধাদের পাঠান প্রিগোশিন।
প্রিগোশিন বর্তমানে কোথায় আছেন, তা স্পষ্ট নয়। মস্কোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, তাঁর বেলারুশে থাকার কথা। বিদ্রোহ থেকে পিছু হটার পর যেসব ভাগনার যোদ্ধা রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিতে যাননি তাঁদেরও বেলারুশে পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে গত বৃহস্পতিবার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কো বলেছিলেন, প্রিগোশিন সেন্ট পিটার্সবার্গে আছেন।
এদিকে সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রিগোশিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিলেন রুশ কর্মকর্তারা। সেখান থেকে অস্ত্র, সোনার বার, পরচুলা ও নকল পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
পুতিনের সঙ্গে সমঝোতা করে বিদ্রোহ থেকে পিছু হটায় প্রিগোশন শাস্তি এড়াতে পেরেছেন বলে মনে করেন সিজার। তিনি বলেন, ‘প্রিগোশিনকে আমি সম্মান করি না। তাঁর ও পুতিনের মতাদর্শ একই। তাঁরা মনে করেন, কঠোর পথ অবলম্বন করে তাঁরা জয় পাবেন। তবে এটা বাস্তব নয়।’