আকাশছোঁয়া ভবনে কেউ থাকেন না

জার্মানির রটওয়াইলে অবস্থিত লিফট পরীক্ষার ভবন এলিভেটর টেস্ট্রামছবি: এক্স থেকে

জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট বা কৃষ্ণ অরণ্যের পূর্ব প্রান্তে প্রাচীন নগরী রটওয়াইলের একটি ভবন দেখে আপনার চোখ আক্ষরিক অর্থেই কপালে উঠতে পারে। আকাশছোঁয়া সুউচ্চ ভবনটি দেখতেও নান্দনিক। দেখলে যে কেউই ভাবতে পারেন, ভবনটিতে বড় বড় কোম্পানির কার্যালয়, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ফ্ল্যাট কিংবা অভিজাত হোটেল থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই উল্টো।

ভবনটির নাম টিকে এলিভেটর টেস্ট্রাম। উচ্চতা ৮০৭ ফুট (প্রায় ৭০ তলার সমান)। এটি জার্মানির সবচেয়ে উঁচু ভবনগুলোর একটি। ভবনটির চারপাশে ভালোভাবে তাকালে আপনার আগের ধারণা পুরোপুরি পাল্টে যাবে। কারণ, এটির কোথাও কোনো জানালা নেই। এর অর্থ হলো এখানে কোনো মানুষ থাকে না। নেই কোনো অফিস, হোটেল বা পানশালা। মূলত আধুনিক মডেলের লিফট বা এলিভেটর পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয় এই ভবন।

এলিভেটর টেস্ট্রাম নামের ভবনটির মালিক জার্মানির এলিভেটর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিকে এলিভেটর। কোম্পানিটি নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারসহ বিশ্বের সুউচ্চ ভবনগুলোর জন্য লিফট সরবরাহ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টাতেও এই কোম্পানির একটি লিফট পরীক্ষার ভবন আছে। এটির উচ্চতা ৪২০ ফুট। চীনের জংশানে এ ধরনের আরেকটি ভবন আছে টিকে এলিভেটর কোম্পানির। এর উচ্চতা ৮১৩ ফুট, যা স্ট্যাচু অব লিবার্টির চেয়ে প্রায় তিন গুণ বড়।

লিফট পরীক্ষার ভবনগুলো উচ্চতায় আরও বড় হতে পারে। যেমন চীনের গুয়াংজুতে জাপানি কোম্পানি হিটাচির তৈরি এইচ ওয়ান টাওয়ার নামের ভবনটির উচ্চতা ৯৪৮ ফুট।

ফিনল্যান্ডের লিফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোন–এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা টোমিও পিকালা বলেন, লিফট পরীক্ষার ভবনগুলো অনেকটা ফর্মুলা ওয়ান রেসিংয়ে অংশ নেওয়া দলগুলোর গাড়ির গতি পরীক্ষার রাস্তার মতো। লিফট তৈরির পর তা নিরাপদভাবে ওঠানামা করার উপযুক্ত হলো কি না, তা পরীক্ষার জন্যই এসব ভবন তৈরি করা হয়। কারণ, বাস্তবে না চালিয়ে এসব লিফট পরীক্ষা করা সম্ভব নয়।

শুধু ওপরে নয়, মাটির গভীরেও আছে লিফট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার অবকাঠামো। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ লিফট পরীক্ষার অবকাঠামো মাটির নিচেই অবস্থিত। এটি ১ হাজার ১৫০ ফুট গভীরে। ফিনল্যান্ডে অবস্থিত এই অবকাঠামো একটি চুনাপাথরের খনির অংশ।

লিফট পরীক্ষার ভবনগুলো পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। পর্যটকদের লিফটের মাধ্যমে ভবনের একেবারে ওপরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।