রাশিয়া যেভাবে জার্মানির নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে
অন্য দেশের নির্বাচনে নাক গলানোর অভিযোগ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নয়। ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে তারা এ কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছিল। এবার জার্মানির পার্লামেন্টে পেশ করা একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-এ জার্মানির নির্বাচনও প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল রাশিয়া। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এবারও ব্যাপকভাবে ভুয়া তথ্য প্রচার করে ২৩ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া।
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যারা
রাশিয়ার এই প্রচারের মাধ্যমে মূলত মধ্যপন্থী দলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সেন্টার ফর মনিটরিং, অ্যানালাইসিস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিসের (সিইএমএএস) লিয়া ফ্র্যুউইর্থ জানিয়েছেন, সিংহভাগ ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে গ্রিন পার্টি, সিডিইউ, এসপিডি ও তাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। সিইএমএএস ষড়যন্ত্র, ভুয়া তথ্য, ইহুদিবিদ্বেষ এবং চরম দক্ষিণপন্থা নিয়ে কাজ করে।
লিয়া আরও জানান, এএফডি (অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি) নিয়ে খুব কম ভুয়া তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে।
যেভাবে ছড়াচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভুয়া সংবাদ
দুটি সাম্প্রতিক উদাহরণ দেখা যাক। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিক থেকে সিডিইউ নেতা ফ্রেডরিখ ম্যার্ৎসের একটা পুরোনো ভিডিও একাধিক এক্স (সাবেক টুইটার) থেকে পোস্ট হতে থাকে। ভিডিওটিতে তাঁর ভঙ্গুর মানসিক চিত্র ধরা পড়ে।
এ–সংক্রান্ত একটা পোস্ট ১০ দিনে প্রায় ৫৫ লাখ ভিউ পেয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা এই ভিডিও শেয়ার করেছেন, তাঁরা একই সঙ্গে এ কথা লিখেছেন যে ম্যার্ৎস ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র জোগান দেওয়ার কথা বলেছেন। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের নিরিখে বিষয়টি খুবই উল্লেখযোগ্য।
আরেকটি ক্ষেত্রে গ্রিন পার্টির নেতা রবার্ট হাবেক ও ক্লদিয়া রথ ভুয়া খবরের শিকার হয়েছেন। ন্যারেটিভ নামের একটি ওয়েবসাইটে একটি খবর এবং একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, এই দুই নেতা ১০ কোটি ইউরোর একটি তহবিল তছরুপ করেছেন।
প্রুশিয়ান কালচারাল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একাধিক ছবি ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে একাধিক ব্যক্তির কাছে সেই ছবি বিক্রি করা হয়েছে। তবে এই দাবি ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য সচেতনতা বৃদ্ধি
ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে কাজ করা সংস্থা নিউজগার্ডের লিওনি ফালার জানিয়েছেন, রাশিয়ার লক্ষ্য, অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং ভোটারদের মেরুকরণ করা। তিনি নিশ্চিতভাবে জানান যে এই অপপ্রচারের মধ্যেও চরম দক্ষিণপন্থী পার্টি এএফডির প্রার্থী অ্যালিস ভাইডেলকে নিয়ে ইতিবাচক প্রচার চালাচ্ছে তারা।
সাধারণত অন্য দেশের সরকার যদি জার্মানিতে ভুয়া খবর ছড়ায়, তা আইনত দণ্ডনীয় নয়। জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারেক্টিভ গবেষণাকেন্দ্রকে এ কথা জানিয়েছে। তবে এ কথাও জানানো হয়েছে যে একটি আন্তবিভাগীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ চালু করা হয়েছে, যারা ভুয়া তথ্যের মাধ্যমে ছড়ানো বিপদগুলোর দিকে নজর রাখছে।
মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।