সিরিয়ায় আটক শামীমা বেগমসহ ৬৬ ব্রিটিশ নাগরিকের প্রত্যাবাসনের দাবি

২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য ছেড়ে আইএসে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন শামীমা বেগমফাইল ছবি

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমসহ ৬৬ ব্রিটিশ নাগরিক ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে আটক রয়েছেন। তাঁদের পাহারায় থাকা কুর্দি দলগুলোর ওপর তুরস্কের সহায়তাপুষ্ট বিদ্রোহী দলগুলোর অব্যাহত হামলার কারণে এই বন্দীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়াজুড়ে অস্থিতিশীলতার পরিবেশ থেকে ফায়দা লুটতে চেষ্টা করছে তুরস্ক। তারা এখন কুর্দি দল ও বাহিনীগুলোর ওপর আঘাত হানছে। এসব দল বা বাহিনী এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মিলে আইএস-বিরোধী লড়াইয়ে শামিল আছে।

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পরিস্থিতির অবনতি হওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ও ব্যক্তি পর্যায়ে তুরস্কের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে। অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, সিরিয়ার এ অঞ্চল কুর্দিদের নিয়ন্ত্রণে থাকাটি অত্যন্ত জরুরি।

কুর্দিদের নিয়ন্ত্রণাধীন কারাগার ও ক্যাম্পে প্রায় ৫০ হাজার সাবেক আইএস যোদ্ধা, নারী ও শিশু আটক রয়েছে। বন্দীদের অধিকাংশ ইরাক ও সিরিয়ার নাগরিক। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ৬৬ জন বন্দী যুক্তরাজ্যের বর্তমান বা সাবেক নাগরিক। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন শামীমা ও আরও ২০ জন নারী এবং ১০ জন পুরুষ। আরও আছে ৩৫টি শিশু।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের মুখপাত্র জন কারবি গত মঙ্গলবার তুরস্কের সহায়তাপুষ্ট বিদ্রোহী সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এসএনএ) অব্যাহত হামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এর কারণে বিভিন্ন কুর্দি দল ও তাদের সামরিক বাহিনী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) আইএস-বিরোধী অভিযান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মানবাধিকারবিষয়ক দাতব্য সংস্থা রিপ্রিভ সিরিয়ায় আটক যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে। রিপ্রিভ বলছে, সিরিয়ায় বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তার কারণে এই বন্দীদের প্রত্যাবাসন করা যুক্তিযুক্ত, তাঁদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা একসময় আইএস যোদ্ধা অথবা শামীমার মতো আইএস সমর্থক হয়ে থাকলেও।

রিপ্রিভের নীতি ও অ্যাডভোকেসির পরিচালক ড্যান ডোল্যান বলেন, সিরিয়ার ‘বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি স্থিরবুদ্ধির পদক্ষেপ দাবি করছে’। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ সাবেক আইএস অনুসারী ব্যক্তি ও তাঁদের সন্তানদের যেভাবে প্রত্যাবাসন করেছে, যুক্তরাজ্যকেও সেই একই ধরনের পথ অনুসরণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ড্যান ডোল্যান।

দাতব্য সংস্থাটির যুক্তি, সিরিয়ায় আটক ব্যক্তিদের ‘অধিকাংশই শিশু এবং এই শিশুদের বেশির ভাগের বয়স ১০ বছরের কম’। এ ছাড়া শামীমাসহ নারীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পাচারের শিকার, আদতে যাঁদের আইএসের দুনিয়ায় চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

বিবিসির পুরোনো প্রতিবেদন থেকে

বিবিসির ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এক প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সালে শামীমা যখন যুক্তরাজ্য থেকে জঙ্গি সংগঠন আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যান, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। তাঁরা হলেন খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আব্বাসি। তখন খাদিজার বয়স ছিল ১৬ বছর, আমিরার ১৫ বছর।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলের প্রধান বাসস্টেশনে এই তিন কিশোরী মোহাম্মদ আল রশিদ নামের একজনের সঙ্গে দেখা করেন। ওই রশিদই তাঁদের আইএস–নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ায় নিয়ে যান।

আরও পড়ুন