রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপের ৭৪ বছরের বিবাহিত জীবন
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। এর পাঁচ বছর আগে ১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করেন তিনি। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যু হলে একা হয়ে পড়েন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ৭৪ বছরের বিবাহিত জীবনে রানি এলিজাবেথ বেশির ভাগ সময়ই ব্যস্ত থেকেছেন রাজকীয় দায়িত্ব পালনে। রানির সেই জীবনের সঙ্গে অনেকটাই মানিয়ে চলতে হয়েছে প্রিন্স ফিলিপকে। রানিকে তাঁর রাজকীয় দায়িত্ব পালনে সহায়তা করেছিলেন তিনি। সন্তানদের প্রতি তিনি মা-বাবা দুজনেরই দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করতেন।
বয়সে প্রিন্স ফিলিপের চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। বিয়ের আগে এলিজাবেথকে ভালো লাগার কথা চিঠি লিখে তাঁর মা–কে জানিয়েছেন প্রিন্স ফিলিপ। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ওই চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘তিনি পুরোপুরি ও বেপরোয়াভাবে রাজকুমারী এলিজাবেথের প্রেমে পড়েছেন।’
কীভাবে দেখা হয়েছিল এই যুগলের? দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের খবর বলছে, ১৯৩৯ সালে প্রিন্স ফিলিপ ও রানি এলিজাবেথের প্রথম দেখা। সে সময় এলিজাবেথ ছিলেন ১৩ বছরের কিশোরী। ১৮ বছরের প্রিন্স ফিলিপ তখন ব্রিটানিয়া রয়্যাল নেভাল কলেজের ক্যাডেট। তবে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দুজনের দেখা হয় আরও কম বয়সে। ৭ বছরের এলিজাবেথ আর ১২ বছরের ফিলিপের প্রথম দেখা হয়েছিল একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে।
রানির আত্মীয় মার্গারেট রোডেস ২০১১ সালে অটোবায়োগ্রাফি ‘দ্য ফাইনাল কার্টেসি’-তে লিখেছেন, প্রথমে এলিজাবেথই ফিলিপের প্রেমে পড়েন। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দুজনের মধ্যে চলছিল চিঠি বিনিময়। ফিলিপ সে সময় রয়্যাল নেভিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর চলমান বিস্ফোরণ ও অরাজকতার কারণে এলিজাবেথ এক প্রাসাদ থেকে অন্য প্রাসাদে অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন। সে সময় উইন্ডসর ক্যাসেলে ছোট বোন মার্গারেটের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন এলিজাবেথ। সে সময় এলিজাবেথ ও তাঁর বোনের দেখাশোনার ভার পড়ে গভর্নেস ম্যারিয়ন ক্রফোর্ডের ওপর। ‘দ্য লিটল প্রিন্সেস’ নামের স্মৃতিকথায় ম্যারিয়ন লেখেন, ফিলিপের নীল চোখ ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন এলিজাবেথ। তবে যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত বিয়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন দুজন।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে ১৯৪৭ সালে এলিজাবেথ ও ফিলিপের বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। তবে সে সময় কেউই ভাবেননি এত অল্প সময়ের মধ্যে এলিজাবেথকে রানির দায়িত্ব নিতে হবে। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যেই এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ কিং জর্জের মৃত্যু হয়। ডিউক অব এডিনবার্গ ফিলিপের স্বপ্ন ছিল নৌবাহিনীতে তাঁর ক্যারিয়ার গড়ে তোলার। বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে এলিজাবেথকে রানির দায়িত্ব নিতে হয়। তিনি হয়ে ওঠেন কুইন এলিজাবেথ।
রানি এলিজাবেথ ছিলেন ষষ্ঠ কিং জর্জের কন্যা। আর প্রিন্স ফিলিপ গ্রিসের ক্ষমতাচ্যুত রাজার ভাইপো। এলিজাবেথ থাকতেন রাজপ্রাসাদে। আর ফিলিপের পরিবার ছিলেন নির্বাসনে।কুইন এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিল।