ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে ইউরোপে বন্ধ হয়ে গেল রাশিয়ার গ্যাস রপ্তানি
রাশিয়া থেকে ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে যাওয়া সোভিয়েত যুগের পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবহনসংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ বুধবার নতুন বছর শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাসের প্রবাহ চালু রাখতে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে যুদ্ধরত রাশিয়া ও ইউক্রেন।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি গ্যাস পরিবহন চুক্তির মেয়াদ আজ বুধবার দিনের শুরুতে শেষ হয়। তবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য জানায়নি ইউরোপ।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি গাজপ্রম বার্তা পাঠানোর অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইউক্রেন এসব চুক্তি নবায়ন করার বিষয়টি বারবার এবং স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করায় ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশটির ভূখণ্ড ব্যবহার করে গ্যাস সরবরাহের কৌশলগত ও আইনি সক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গাজপ্রম।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল আটটা থেকে ইউক্রেনের ভূখণ্ড দিয়ে ইউরোপে পরিবহনের জন্য রাশিয়ার কোনো গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি।’
ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী জার্মান গালুশচেঙ্কো বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে রুশ গ্যাস পরিবহন বন্ধ করা হয়েছে।
ইউক্রেন বর্তমানে রাশিয়া থেকে পরিবহন ফি বাবদ বছরে ৮০ কোটি ডলার লোকসান করছে। গাজপ্রম গ্যাস বিক্রিতে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার হারাতে পারে।
২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে এক দশক ধরে বিপর্যস্ত সম্পর্কের অবসান ঘটে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ইউরোপে পরিবহনের জন্য রাশিয়ার প্রাচীনতম গ্যাস রুটটি। ২০১৪ সালের পর থেকে রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ করে দেয় ইউক্রেন।
ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার গ্যাস পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছি। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। রাশিয়া তাদের বাজার হারাচ্ছে। তারা আর্থিক লোকসানে ভুগবে। ইউরোপ এরই মধ্যে রুশ গ্যাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সামরিক সংঘাতের মধ্যে ইউক্রেন চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনড়।
রাশিয়া পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই করে ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে। একটি শিল্প সূত্রের মতে, গত বছর ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিল।
কৃষ্ণসাগরের তলদেশে থাকা তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে এখনো গ্যাস রপ্তানি করছে রাশিয়া। তুর্কস্ট্রিমের দুটি লাইন রয়েছে। একটি দিয়ে তুরস্কের বাজারে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। অন্যটি হাঙ্গেরি, সার্বিয়াসহ মধ্য ইউরোপের ক্রেতাদের কাছে গ্যাস সরবরাহ করে।