শিকড়ের সন্ধানে ঢাকায় এসে খালি হাতে ফিরেছেন ব্রিটিশ তরুণ রাইয়ান
ব্রিটিশ তরুণ রাইয়ান কুদ্দুস। বয়স ২৩ বছর। থাকেন লন্ডন থেকে ১৩০ মাইল দূরের শহর বার্মিংহামে। তাঁর দাদা আবদুল কবির কুদ্দুস ২০১৭ সালে ৮৪ বছর বয়সে বার্মিংহামে মারা যান। আবদুল কুদ্দুসের স্ত্রী আরলেইন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ। কুদ্দুস দম্পতির দুই সন্তান—মার্ক ও থাইরোন। রাইয়ান কুদ্দুস থাইরোনের ছেলে।
আবদুল কুদ্দুস জীবদ্দশায় পড়ালেখা ও জন্মস্থান ছাড়া বাংলাদেশ জীবন কিংবা পরিবার সম্পর্কে তেমন কিছুই নিজের স্ত্রী–সন্তানদের জানাননি। বাংলাদেশে তাঁর পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সব সময় তা এড়িয়ে যেতেন। রাইয়ানের দাবি, তাঁর দাদা ১৯৫৩ সালে লন্ডনে আসার পর আর কখনো বাংলাদেশে যাননি।
রাইয়ান প্রথম আলোর এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টে থাকা তথ্য অনুযায়ী আবদুল কুদ্দুসের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৬ জানুয়ারি। কুদ্দুসের শৈশব কেটেছে ময়মনসিংহে। কুদ্দুসের জন্মের আগে তাঁর বাবা মারা যান। আর মায়ের মৃত্যু হয় তাঁর জন্মের দুই বছর পর। তাঁদের পারিবারিক উপাধি ছিল খন্দকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করে বিমানবাহিনীতে পাইলট হিসেবে যোগ দেন কুদ্দুস। ১৯৫৫ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। সেখানে বিয়ে করে পরিবার গড়েন। এরপরে আর বাংলাদেশে ফেরেননি। ১৯৭০ সালে একটি টেলিভিশনের খবরে কুদ্দুস তাঁর ভাইকে দেখতে পান। ভাইকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের চিনিয়ে দেন।
পরিবারের সদস্যদের কুদ্দুস বলেন, টিভিতে যাঁকে দেখা গেল, তিনি তাঁর ভাই ফারুক। চাকরি করেন সেনাবাহিনীতে। তাঁর বাবা–দাদারা এলাকায় (ময়মনসিংহে) একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এসব তথ্যের বাইরে রাইয়ানের কাছে বাংলাদেশে তাঁর বাবার আত্মীয়স্বজন সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। দীর্ঘদিন থেকে রাইয়ানের দাদি আরলেইন স্মৃতিভ্রম রোগে আক্রান্ত। তাই দাদা আবদুল কুদ্দুসের পারিবারিক শিকড় সম্পর্কে দাদি আরলেইনের কাছ থেকে জানার তেমন কোনো সুযোগ নেই।
২০১৭ সালে আবদুল কুদ্দুসের মৃত্যুর পর রাইয়ান বাংলাদেশে তাঁর দাদার পরিবারের শিকড় ও দাদার বংশধরদের খুঁজে বের করতে উদ্যোগী হন। দাদার বংশের সম্পর্কে জানার কৌতূহল রাইয়ানের। রাইয়ান মনে করেন, তাঁর দাদার বংশের অনেকেই বাংলাদেশে আছেন এবং এই পরিবারের নিশ্চয়ই কোনো ইতিহাস আছে।
রাইয়ান তাঁর পরিবারের আদি-অন্ত জানতে চান। এই উদ্যোগে পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশে পেয়েছেন তিনি। রাইয়ান ও তাঁর পরিবারের কাছে আবদুল কুদ্দুস সম্পর্কে যেটুকু তথ্য রয়েছে, তা নিয়ে রাইয়ান ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে আসেন। এই সময় তিনি ঢাকায় তিন সপ্তাহ অবস্থান করেন। ঢাকায় এসেই প্রথমে তিনি তেজগাঁওয়ে বিমানবাহিনীর সদর দপ্তরে যান। কিন্তু সেখানে রাইয়ানকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান।
এরপর তিনি যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আবদুল কুদ্দুস সম্পর্কে জানতে চান। রেজিস্ট্রার অফিস থেকে একটি ই–মেইল ঠিকানা দিয়ে সে ঠিকানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্কাইভে আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবদুল কুদ্দুসের অধ্যয়নকালীন যেকোনো নথি খুঁজে বের করার অনুরোধ জানিয়ে ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি ই–মেইল করেন। কিন্তু ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ই–মেইলের কোনো উত্তর পাননি রাইয়ান।
এখানেই থেমে যাননি রাইয়ান। কোনোভাবেই দাদা আবদুল কুদ্দুস বা তাঁর পরিবারের খোঁজ না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ভিডিও শেয়ার করে সাহায্যের আকুতি জানিয়েছেন। এ ছাড়া শিকড়ের খোঁজে রেডিও জকি (আরজে) কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, যদি তিনি কোনো সাহায্য করতে পারেন।