ইউক্রেন যুদ্ধের ১০০০ দিন
রাশিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা, পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা
রাশিয়ার ব্রিয়ানস্কে গোলাবারুদের গুদামে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত বলা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। গতকাল মঙ্গলবার যুদ্ধের সহস্রতম দিনে এই হামলা চালানো হয়। এমন হামলা চালানো হলে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছে মস্কো। তাই গতকাল হামলার পর ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল জানায়, এদিন বিকেলে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ব্যবহার করে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইউক্রেন। সেগুলোর সব কটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করা হয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ওই এলাকায় একটি সামরিক স্থাপনায় আগুন ধরে যায়। এতে কেউ হতাহত হননি।
রুশ মন্ত্রণালয়ের এই বক্তব্যের আগে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানায়, তারা রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় একটি গোলাবারুদের গুদামে হামলা চালিয়েছে। এলাকাটি রুশ সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার ভেতরে। হামলার পর ১২টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ওই হামলায় এটিএসিএমএস ব্যবহার করা হয়েছে কি না, সেটা তারা নিশ্চিত করেনি।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত বলা হচ্ছে। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা পেয়েছে কিয়েভ। তার মধ্যে ছিল দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও। দিন কয়েক আগে এসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এই অনুমতিতে যুদ্ধ আরও সংঘাতময় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তখন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, বাইডেনের এমন সিদ্ধান্ত ‘আগুনে ঘি ঢালার’ মতো। এতে চটেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরও। তাঁরা বলছেন, আগামী জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে বসার আগেই ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ বাধাতে চাইছে বাইডেন প্রশাসন।
বাইডেনের অনুমতির পর ইউক্রেন যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে পারে, সে আশঙ্কা আগেই করছিল রাশিয়া। গতকালই নিজেদের পরমাণুনীতিতে পরিবর্তন এনেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশের সমর্থন নিয়ে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলে পাল্টা জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে মস্কো। শুধু তা–ই নয়, কোনো জোটের সদস্যদেশ যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়, তাহলে পুরো জোটই এই আগ্রাসন চালিয়েছে বলে বিবেচনা করতে পারবে ক্রেমলিন।
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। এরই মধ্যে এমন সময় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেন হামলা চালাল, যখন শীতকাল সামনে রেখে দেশটিতে হামলা জোরদার করেছে মস্কো। গত রোববারই শুধু ইউক্রেন লক্ষ্য করে দুই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে তারা। এটি ছিল গত তিন মাসের মধ্যে রাশিয়ার চালানো সবচেয়ে বড় হামলা।
জটিল এই পরিস্থিতির মধ্যে যুদ্ধের সহস্রতম দিন উপলক্ষে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘কে শেষ পর্যন্ত জিতবে—যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। হয় শত্রুদের হারিয়ে আমরা জিতব, না হয় ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে শত্রুরা জিতবে।’