বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে মন্তব্য করে অস্বস্তিতে লেবার পার্টির নেতা স্টারমার
বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। তার এই মন্তব্যের পর সেখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নেতারাও।
নির্বাচনের আগে এমন ঘটনায় কিছুটা বিপাকে পড়েছে দলটি। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় ভোটের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তীব্র অসন্তোষের মুখে নিজের সুর কিছুটা নরম করেছেন এই রাজনীতিবিদ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি একটি টেলিভিশনের সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লেবার পার্টির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে মন্তব্য করে যে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছেন, তার জন্য তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি এই ঘটনায় বাড়তে থাকা ক্ষোভ প্রশমন করতে চান।
কিয়ার স্টারমারের ওই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন তাঁর দলেরই নেতা সাবিনা ইসলাম। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই নারী টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার ডেপুটি লিডার ও কাউন্সিলর ছিলেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসনের লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থী রুশনারা আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা স্টারমারের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি প্রচার করছেন। লেবার পার্টিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা।
বাংলাদেশি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘আমার কারণে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, সে জন্য আমি অনেক বেশি উদ্বিগ্ন। নিশ্চিতভাবে এটি আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমি কারও অনুভূতিতে আঘাত করতে চাইনি। কিন্তু আমি প্রকৃত অর্থে উদ্বিগ্ন যে আমি সেটি করেছি। লেবার পার্টি ও বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে সম্পর্ক অনেক বেশি শক্তিশালী।’
যুক্তরাজ্যে ৪ জুলাই অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে সব মিলিয়ে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আট ব্যক্তি মনোনয়ন পেয়েছেন। স্টারমারের বক্তব্যের কারণে এসব প্রার্থী বিপাকে পড়েছেন।
গত সোমবার সংবাদমাধ্যম দ্য সান আয়োজিত এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে কিয়ার স্টারমার বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে যেসব মানুষ আসছেন, তাঁদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। কারণ, তাঁদের বিষয়টি তদারক করা হচ্ছে না।
রক্ষণশীল সরকারের রুয়ান্ডা অভিবাসী প্রত্যাবাসন প্রকল্পের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ছোট নৌকায় করে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে আসা ব্যক্তিদের জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
স্টারমার বলেন, এ সরকারের অধীনে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর হার ৪৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
রুয়ান্ডা প্রকল্পকে ব্যয়বহুল উল্লেখ করে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তাঁদের নিজস্ব পরিকল্পনা আছে বলে জানান এই রাজনীতিবিদ।
তবে যুক্তরাজ্যে যাঁরা স্থানীয় অথবা যাঁদের থাকার অনুমতি আছে, তাঁদেরকে তাঁর সরকার ফেরত পাঠাবে না বলেও আশ্বাস দেন কিয়ার স্টারমার।
বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে স্টারমারের করা এই মন্তব্যকে পুঁজি করে বিরোধীরা গুজব ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সম্পাদনা করা একটি ভিডিও ক্লিপ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লেবার পার্টিবিরোধীরা প্রচারপত্র বিলি করছেন।
লেবার পার্টির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশি অভিবাসীদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে বলে এসব প্রচারপত্রে মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
ওই অনুষ্ঠানে তিনি কেন শুধু বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে স্টারমার বলেন, ‘বাংলাদেশকে এককভাবে উল্লেখ করার কোনো উদ্দেশ্য আমার ছিল না। যেসব দেশ থেকে এসে মানুষ অ্যাসাইলাম (আশ্রয়) দাবি করছে, আমি শুধু সেসব দেশের কথা বলতে চেয়েছিলাম। এ সময় আমার মাথায় সবার আগে বাংলাদেশের নাম এসেছে।’
স্টারমার বলেন, ‘আমি আসলে বাংলাদেশকে আলাদাভাবে বোঝাতে চাইনি। আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও আমাদের দেশের প্রতি বাংলাদেশি কমিউনিটির অবদানকে আমি ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করি।’