রাশিয়ায় পুতিন-উন বৈঠক, কয়েক ঘণ্টা আগে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি পিয়ংইয়ংয়ের স্যাটেলাইট কর্মসূচি নিয়ে তাঁর আলোচনা হবে। আজ বুধবার রাশিয়ার একটি উৎক্ষেপণকেন্দ্রে কিম উনের সঙ্গে বৈঠকের আগে পুতিন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পুতিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মস্কোর অস্ত্র–গোলাবারুদের মজুত বাড়াতে উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সরবরাহ পাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা কথা বলবেন কি না।
জবাবে পুতিন বলেন, তাঁরা সব বিষয়ে আলোচনা করবেন। তবে ওয়াশিংটন এবং মিত্রদের ধারণা, এ দুই নেতা প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়টিকে আলোচনায় প্রাধান্য দেবেন।
গতকাল মঙ্গলবার ব্যক্তিগত ট্রেনে করে রাশিয়ায় পৌঁছান কিম জং–উন। আজ ভস্তোচনি কসমোড্রোম উৎক্ষেপণকেন্দ্রে কিম জং–উনকে স্বাগত জানান পুতিন। এ সময় তিনি উনের সঙ্গে প্রায় ৪০ সেকেন্ড ধরে করমর্দন করেন এবং বলেন, ‘আমি আপনাকে দেখে আনন্দিত।’
ভস্তোচনি কসমোড্রোম রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় আমুরে অবস্থিত একটি আধুনিক মহাকাশযান উৎক্ষেপণকেন্দ্র।
কিম জং–উন তাঁকে রাশিয়ায় আমন্ত্রণ এবং উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ জানান। একজন দোভাষীর সহায়তা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন উন।
বার্তা সংস্থা আরআইএ প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, কিম এবং পুতিন করমর্দন করছেন, বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের চারপাশে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং রাশিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পর তাঁরা হেঁটে কাচের দেয়ালে ঘেরা একটি ভবনে ঢোকেন।
টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গেছে, পুতিন উত্তর কোরিয়ার নেতাকে উৎক্ষেপণকেন্দ্রটি ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিম জং–উন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন।
আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দুই দেশ রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার নেতাদের মধ্যকার এ বৈঠকের দিকে নজর রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব ও মিত্ররা। তাদের আশঙ্কা, পুতিন ও কিম জং–উন অস্ত্রবাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাবেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলে আসছেন, কিম রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করবেন। তবে মস্কো ও পিয়ংইয়ং বলেছে, তাদের এ ধরনের কোনো ইচ্ছা নেই।
স্যাটেলাইট তৈরিতে রাশিয়া কেন কিম উনকে সহযোগিতা করবে, তা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের পুতিন বলেন, রকেট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার নেতা ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাঁরা মহাকাশযান তৈরিরও চেষ্টা করছেন।
কিম জং–উন নজরদারি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। উত্তর কোরিয়ায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং আক্রমণের ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন তৈরির ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি।
এদিকে দুই নেতার বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে পিয়ংইয়ংয়ের কাছের একটি এলাকা থেকে দুটি স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী এবং জাপান সরকারের দাবি, দেশটির পূর্ব উপকূলবর্তী সাগর এলাকায় এ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি কিম জং–উনের বিদেশে থাকা অবস্থায় উত্তর কোরিয়ার প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনা। এর আগে শাসনক্ষমতার ১২ বছরে মাত্র ৭ বার বিদেশ সফর করেছেন কিম উন। এর সবগুলোই ঘটেছে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে। তিনি দুবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আন্তকোরীয় সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন।