রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে হামলা নিয়ে কেন নীতি বদলালেন বাইডেন, প্রভাব কী হবে
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে হামলা চালাতে এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজ বলছে, রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো যাবে। এটা কিয়েভকে জানিয়ে দিয়েছে বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন।
এর আগে এ ধরনের হামলায় ওয়াশিংটনের সায় ছিল না। মার্কিন প্রশাসনের আশঙ্কা ছিল, রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে কিয়েভকে হামলা চালানোর অনুমতি ইউক্রেন যুদ্ধের আরও সম্প্রসারণ ঘটাতে পারে।
মুখে মুখে হামলা হয় না.... ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিজেরাই কথা বলবে।ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
তবে এমন একসময় মার্কিন প্রশাসন আগের এ নীতি থেকে সরে এলো, যখন মাস দুয়েকের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া নিয়ে আপত্তি রয়েছে ট্রাম্পের।
এরই মধ্যে রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ার বিমানঘাঁটিতে এবং জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে রুশ সামরিক স্থাপনায় এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে কখনোই রাশিয়ার ভূখণ্ডের ভেতরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর অনুমতি দেয়নি ওয়াশিংটন।
কেন অনুমতি দিলেন বাইডেন
যুদ্ধক্ষেত্রে এক বছরের বেশি সময় ধরে আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম বা এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে ইউক্রেন। তবে রুশ ভূখণ্ডে নয়, বরং ইউক্রেনের বাহিনী নিজেদের ভূখণ্ডের ভেতর রুশ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করত।
আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা আশা করছি, তিনি (ট্রাম্প) এসে সিদ্ধান্ত বদলাবেন না।ওলেক্সি গোনচারেঙ্কো, ইউক্রেনের এমপি।
এরই মধ্যে রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ার বিমানঘাঁটিতে এবং জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে রুশ সামরিক স্থাপনায় এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে কখনোই রাশিয়ার ভূখণ্ডের ভেতরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর অনুমতি দেয়নি ওয়াশিংটন।
চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে এখন পর্যন্ত যেসব শক্তিশালী অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে লকহেড মার্টিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটা ৩০০ কিলোমিটারের বেশি (প্রায় ১৮৬ মাইল) দূরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম।
এখন ওয়াশিংটনের নীতি পরিবর্তনের বড় কারণ হতে পারে উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে, রাশিয়া–ইউক্রেন সীমান্তের কুরস্ক অঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এসব সেনা যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করছে। ওই অঞ্চলটি গত আগস্ট থেকে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইউক্রেন যুক্তি দিয়েছিল যে রাশিয়ার অভ্যন্তরে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি না দেওয়া, পিঠের পেছনে হাত বেঁধে যুদ্ধ করতে বলার মতোই।
এখন ওয়াশিংটনের নীতি পরিবর্তনের বড় কারণ হতে পারে উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে, রাশিয়া–ইউক্রেন সীমান্তের কুরস্ক অঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এসব সেনা যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করছে। ওই অঞ্চলটি গত আগস্ট থেকে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাইডেন প্রশাসনের অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জানাননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে গতকাল রোববার তিনি বলেন, ‘মুখে মুখে হামলা হয় না...ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিজেরাই কথা বলবে।’
প্রভাব কেমন হবে
বর্তমানে কুরস্কের এক হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা দখলে রেখেছে ইউক্রেনের বাহিনী। এখন তারা ওই অঞ্চলের চারপাশে হামলা চালাতে পারবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরীয় সেনাদের পাল্টা আক্রমণের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রুশ বাহিনী ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে এমন হামলা শুরু করতে পারে।
এখন ইউক্রেনীয় বাহিনী কুরস্কে রুশ সেনাবহর, অবকাঠামো, গোলাবারুদের মজুতে সরাসরি হামলা চালাতে পারবে। যদিও শুধু এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ হয়তো যুদ্ধের গতি বদলে দিতে পারবে না, তবে ইউক্রেনকে অনেকটা এগিয়ে রাখবে।
এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিয়েভে নিযুক্ত একজন পশ্চিমা কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, ‘আমি মনে করি না যে এটা যুদ্ধের নির্ণায়ক হবে। তবে এতে রাশিয়ার যুদ্ধব্যয় আরও বাড়তে পারে।’
যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটবে কি
বাইডেন প্রশাসনের এত দিন একটাই ভয় ছিল, রাশিয়ার ভূখণ্ডের ভেতরে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালাতে দিলে যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এ বিষয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভেতরে হামলার ঘটনাকে মস্কো–ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর দেশগুলোর ‘সরাসরি অংশগ্রহণ’ হিসেবে বিবেচনা করবে।
ন্যাটোয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত কুর্ট ভলকার বলেন, যুদ্ধে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের পরিসর সীমিত রেখে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন অযৌক্তিকভাবে ইউক্রেনের আত্মরক্ষায় একতরফা বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে।
এই কূটনীতিক আরও বলেন, এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত ‘পুরোপুরি স্বেচ্ছাচারী’ এবং রাশিয়াকে উসকানি না দেওয়ার আশঙ্কা থেকে করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে
জো বাইডেন এখন রাজনৈতিক পালাবদলের সময় পার করছেন। ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাস দুয়েক আগে এসে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতিতে পরিবর্তন আনলেন তিনি।
জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর এমন নীতি অপরিবর্তিত রাখবেন কি না, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। যদিও তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মিত্র এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বাইডেনের নীতি পরিবর্তনের কড়া সমালোচনা করেছেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমার বাবার শান্তি স্থাপন ও মানুষের জীবন বাঁচানোর সুযোগ পাওয়ার আগেই সামরিক শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিতে চায়।’
পরবর্তী ট্রাম্প প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স বলেছেন, ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেওয়া মার্কিন প্রশাসনের উচিত হবে না।
হবু মার্কিন প্রশাসনের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ইউক্রেনীয়দের। এ বিষয়ে ইউক্রেনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওলেক্সি গোনচারেঙ্কো বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা আশা করছি, তিনি (ট্রাম্প) এসে সিদ্ধান্ত বদলাবেন না।’