তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পরও ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত মানুষ উদ্ধার হয়েছেন। বিস্ময়করভাবে জীবিত মানুষ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্ধারকারীরা হাসি-কান্নার আবেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করেছেন।
গত সোমবার ভোরে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। ভূমিকম্পে হাজারো ভবন ধসে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অজ্ঞাতসংখ্যক মানুষ আটকে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছের শহর তুরস্কের কাহরামানমারাস। শহরটিতে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে একেকজন জীবিত মানুষ উদ্ধারের পর উদ্ধারকারীরা পরস্পরকে আলিঙ্গন করছিলেন। তাঁরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন।
তুরস্কের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর একটি আদিয়ামান। শহরটিতে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে চার বছর বয়সী ইয়াগিজ কমসু নামের একটি শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধারের পর উদ্ধারকারী ও আশপাশের মানুষ উল্লাস করেন। উদ্ধারকারীরা ইয়াগিজকে একটি জেলি বিন দেন। পরে তাঁরা শিশুটির ২৭ বছর বয়সী মা আইফার কমসুকে উদ্ধার করেন।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের একটি বেজমেন্ট থেকে ১৭ বছর বয়সী আদনান মুহাম্মাদ কোরকুটকে উদ্ধার করেন উদ্ধারকারীরা। তিনি ৯৪ ঘণ্টা ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিলেন। বেঁচে থাকার জন্য নিজের প্রস্রাব পান করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে উদ্ধারের পর আনন্দ-কান্নামিশ্রিত এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আদনান উদ্ধারকারীদের বলেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ, আপনারা এসেছেন।’
উদ্ধারকারীরা তুরস্কের ইস্কেন্দারুন শহরের একটি উঁচু অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আটকে থাকা নয়জনকে শনাক্ত করেন। তাঁদের মধ্য থেকে তাঁরা ছয়জনকে টেনে বের করেন। এই ছয়জনের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। এই নারীকে বের করে আনার পর আশপাশের মানুষেরা চিৎকার করে বলেন, ‘আল্লাহ মহান।’
ইস্কেন্দারুনের এক উদ্ধারকর্মী বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষদের সঙ্গে তাঁরা মজা করছিলেন। এর মাধ্যমে তাঁরা আটকে পড়া ব্যক্তিদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন।
কাহরামানমারাসের একটি উদ্ধার প্রচেষ্টার ভিডিওতে দেখা যায়, দুই কিশোরী বোন উদ্ধার হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। তখন এক জরুরিকর্মী তাঁর স্মার্টফোনে একটি পপগান বাজিয়ে দুই বোনকে চাঙা রাখার চেষ্টা করছিলেন।
একটি জার্মান দল জানায়, তারা তুরস্কের কিরিখান শহরের একটি ধসে পড়া বাড়ি থেকে এক নারীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তারা ৫০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই উদ্ধারকাজ করে।
তুরস্কের একটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, একজন আটকে পড়া নারীর সঙ্গে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা কথা বলছেন। এই নারী উদ্ধারকারীদের বলেছেন, তিনি বেঁচে থাকার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা ব্যক্তিদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দ্রুত কমে আসছে।