নিজেদের যোদ্ধাকে ‘নির্মমভাবে’ হত্যার ভিডিও প্রকাশ রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপের
ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাদের পাশাপাশি যুদ্ধ করছে রুশ ভাড়াটে যোদ্ধা বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। যুদ্ধক্ষেত্রে এই বাহিনীর কুখ্যাতি সময়ে সময়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। আবারও হলো। এবার নিজেদের এক যোদ্ধাকে ‘নির্মমভাবে’ হত্যার ভিডিও প্রকাশ করেছে তারা। খবর বিবিসির
ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে ওয়াগনারের ‘গ্রে জোন’ নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে। সেখানে হত্যার শিকার ওই যোদ্ধার নাম দিমিত্রি ইয়াকুশচেঙ্কো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়াগনার গ্রুপে যোগ দেওয়ার মাত্র চার দিন পর তিনি ইউক্রেনীয় সেনাদের পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে কোথায় ও কখন ওই ভিডিও ধারণ করা, তা জানানো হয়নি।
ভিডিওটির প্রথম অংশে দেখা গেছে, ইয়াকুশচেঙ্কো ইউক্রেনীয় সেনাদের কাছে বন্দী রয়েছেন। ভিডিওর ওই অংশ ইউক্রেনের ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এসপ্রেসো ডট টিভি থেকে নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি। সেখানে ইয়াকুশচেঙ্কোকে বলতে শোনা যায়, রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ইউক্রেনের দখলে চলে আসতে পারে।
ভিডিওতে লেখা বার্তায় জানানো হয়েছে, ইয়াকুশচেঙ্কো খুনের দায়ে রাশিয়ার একটি কারাগারে বন্দী ছিলেন। পরে ওয়াগনারে যোগ দেওয়ার শর্তে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য রাশিয়ার বহু কারাবন্দীকে নিয়োগ দিয়েছে ওয়াগনার। এর বিনিময়ে তাঁদের কারাগার থেকে মুক্তি এবং মোটা অঙ্কের বেতনের লোভ দেখানো হয়েছে।
গত নভেম্বরে ইয়েভজেনি নুঝিন নামের নিজেদের আরেক যোদ্ধাকে হত্যা করেছিল ওয়াগনার গ্রুপ। ওই হত্যাকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করে গ্রে জোন টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘সহকর্মী ইয়েভজেনি নুঝিনের মতো তিনিও (ইয়াকুশচেঙ্কো) একই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।’
ভিডিওর প্রথম অংশের পর দেখা যায়, ইয়াকুশচেঙ্কো একটি কক্ষের মধ্যে বসে আছেন। তাঁর পেছনে হাতুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আরেকজন। এ সময় ভিডিওতে দেখানো একটি বার্তায় লেখা ছিল, ‘বিশ্বাসঘাতকতার বিচার’। ইউক্রেনের পক্ষে যোগ দেওয়ার পর কীভাবে তাঁকে আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে, ভিডিওর একপর্যায়ে এ নিয়েও বর্ণনা দিয়েছেন ইয়াকুশচেঙ্কো।
এর পরপরই ইয়াকুশচেঙ্কোকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। আঘাতের পর মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তারপর আরও কয়েকবার হাতুড়িপেটা করা হয় তাঁকে। তখন ভিডিওতে লেখা প্রদর্শন করা হয়, ‘আদালতের বিচার শেষ হয়েছে।’
এর আগে গত নভেম্বরে ইয়েভজেনি নুঝিন নামের নিজেদের আরেক যোদ্ধাকে হত্যা করেছিল ওয়াগনার গ্রুপ। ওই হত্যাকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করে গ্রে জোন টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘সহকর্মী ইয়েভজেনি নুঝিনের মতো তিনিও (ইয়াকুশচেঙ্কো) একই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই রোগে আক্রান্ত হলে আপনি ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরে ভূগর্ভস্থ কক্ষে শেষ বিচারের জন্য আপনার জ্ঞান ফেরে।’
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর ওয়াগনার গ্রুপ ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রধান কার্যালয় খুলেছে তারা। ওয়ানগারের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছের মানুষ হিসেবেও পরিচিত। পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত শহরে রুশ হামলার কৃতিত্ব নিজের ওয়াগনার গ্রুপকে দিয়েছেন তিনি। এমনকি কৃতিত্ব দাবি করতে গিয়ে রুশ বাহিনীকে ছোট করে দেখাতেও পিছপা হননি।