২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে কতটা সুরক্ষা দেবে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা

সোমবার ভোরে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়ার বাহিনী। হামলার পর ছুটতে শুরু করে আতঙ্কিত মানুষ। কিয়েভ, ইউক্রেন ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গতকাল সোমবার ইউক্রেনের বড় শহরগুলো কেঁপে ওঠে। আজ মঙ্গলবারও কয়েকটি শহরে হামলা হয়েছে। এতে হতাহতের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে আরও সামরিক সহায়তা চেয়েছে কিয়েভ। তবে বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, পশ্চিমাদের কাছ থেকে পাওয়া কোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাই রুশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পুরোপুরি ঠেকাতে পারবে না।

গতকালের হামলায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করা হয়েছে। ইউক্রেন আবার দাবি করেছে, হামলা চালাতে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ ও প্রতিবেশী বেলারুশ থেকে ইরানের তৈরি ড্রোন পাঠিয়েছিল মস্কো। গতকালের হামলা থেকে বাদ পড়েনি কিয়েভও। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাজধানী শহরটিতে হামলার ঘটনা বেশ বিরল। তা ছাড়া ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে মূল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কিয়েভের অবস্থান বেশ দূরে।

ওই সব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশির ভাগ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগে ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিস শিমহাল। একই সঙ্গে নিজ দেশের মানুষকে রক্ষায় পশ্চিমা বন্ধুদের কাছে আরও আধুনিক অস্ত্র চেয়েছেন তিনি। তবে অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করার পরও গতকালের হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি তো আছেই।

অস্ত্র সহায়তা চাওয়ার বিষয়ে দ্য ওয়ার জোন ওয়েবসাইটের সম্পাদক টেইলর রোগোওয়ে বলেন, সোমবার হামলার পর এখন ইউক্রেনে পশ্চিমা আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থাপনে জোর আহ্বান জানানো হবে। তবে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ঠেকানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ—এমনকি আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলোর কাছেও।

সোমবারের হামলার পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সে দিন রাশিয়া মোট ৯৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। এর মধ্যে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ৫২টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। ধ্বংস হওয়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ৪৩টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছিল।

ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) গবেষক ফ্রাঙ্কোইস হেইসবার্গ। তিনি মনে করেন, প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলো কোন কোন স্থাপনা ও জনবসতি রক্ষায় মোতায়েন করা হবে—এই কঠিন সিদ্ধান্ত কিয়েভকেই নিতে হবে। কারণ, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত থেকে সবকিছু রক্ষার চেষ্টা করতে গেলে দেখা যাবে, আদতে কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলের উদাহরণ টানেন ফ্রাঙ্কোইস হেইসবার্গ। তিনি বলেন, ইউক্রেনের চেয়ে ইসরায়েল ২৭ গুণ ছোট। এরপরও তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ছবিতে রাশিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ থেকে ইউক্রেনে বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দৃশ্য। ১০ অক্টোবর
ছবি: রয়টার্স

পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারবে না কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে ইউক্রেনকে পুরোপুরি সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ‘জেনস’-এর কর্মকর্তা নিকোলাস ফিওরেনজা। তাঁর কথায়, ‘আমি মনে করি না, এমন কোনো দেশ আছে যারা নিজ সীমানায় অনুপ্রবেশ করা প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন বা উড়োজাহাজ ভূপাতিত করতে পারবে।’

‘আমি মনে করি না এমন কোনো দেশ আছে, যারা নিজ সীমানায় অনুপ্রবেশ করা প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন বা উড়োজাহাজ ভূপাতিত করতে পারবে’
—নিকোলাস ফিওরেনজা, গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা জেনসের কর্মকর্তা

সোমবারের হামলার পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সে দিন রাশিয়া মোট ৯৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। এর মধ্যে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ৫২টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। ধ্বংস হওয়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ৪৩টি ছিল ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।
 
ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধরন নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের কর্মকর্তা গুস্তাভ গ্রেসেল। তাঁর মতে, গতকাল হামলা চালাতে রাশিয়া স্বল্পপাল্লার ইস্কান্দার ও তোচকা-ইউ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি ছিল কালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।

এদিকে ইউক্রেনের হাতে তৎকালীন সোভিয়েত আমলের এস-৩০০সহ অন্য কিছু আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেগুলোর গোলাবারুদে ইতিমধ্যে টান পড়েছে। আর ড্রোন হামলা ঠেকাতে কাঁধে বহনযোগ্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা (ম্যানপ্যাড) ব্যবহার করছে তারা।

গুস্তাভ গ্রেসেল বলেন, ম্যানপ্যাড স্বল্পপাল্লার। তাই বড় কোনো শহর রক্ষা করতে গেলে প্রচুর পরিমাণে এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দরকার পড়বে। মোটাদাগে বলতে গেলে, ইউক্রেনকে পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারে এমন কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নেই। তিনি আরও বলেন, কারণ, রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধরন, গতি, সংখ্যা ও আঘাত হানার আগে যে উচ্চতা দিয়ে উড়ে যায়, তা আলাদা। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কাজে লাগাতে হবে; আর সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।  

স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র আকারে তুলনামূলক ছোট, ওজনে হালকা ও সহজে বহনযোগ্য
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বসন্তের আগে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো কঠিন

সাম্প্রতিকতম ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইউক্রেনে ‘মধ্য ও দূরপাল্লার অত্যাধুনিক’ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিকট ভবিষ্যতে কিয়েভকে ‘আইরিস-টি’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি এসেছে জার্মানি থেকে।

আইরিস-টির বড় একটি শহরকে সুরক্ষা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। আশপাশের ৪০ কিলোমিটার ও উচ্চতার দিক দিয়ে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত এর সুরক্ষাবলয়ের আওতায় থাকে। তবে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হাতে পাওয়ার পর এর ওপর প্রশিক্ষণ নিতে ইউক্রেনীয়দের ১২ সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন জেনসের কর্মকর্তা নিকোলাস ফিওরেনজা। তিনি বলেন, ‘তাই আইরিস-টি হাতে পেলেও আগামী বসন্তের আগে ইউক্রেনের কোনো লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না।’

এদিকে ইউক্রেনে সরবরাহ করার মতো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পশ্চিমাদের কাছে কম রয়েছে বলে জানান পোলিশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রকল্পের প্রধান ওজকিচ লরেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘এরপরও রাশিয়ার হামলার শিকার হওয়া বেসামরিক লক্ষ্যগুলোর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ও ইউক্রেনীয়দের মনোবল বাড়াতে তাঁদের কাছে কী ধরনের অস্ত্র পাঠাতে পারি, তা আমাদের ঠিক করতে হবে।’