২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ইউক্রেনে কি এবার ‘প্ল্যান বি’ কার্যকর করবে রাশিয়া

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনএএফপি ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দাবি, ইউক্রেনে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিজয় নিশ্চিত করতে না পেরে এখন কৌশলে পরিবর্তন আনছে রাশিয়া। রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের জন্য এখন ইউক্রেনকে বাধ্য করতে চাইছে মস্কো। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক বিশ্লেষণ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। মস্কোর নতুন কৌশলকে ‘প্ল্যান বি’ বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

এত দিন পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ দাবি করে আসছিলেন, ইউক্রেনে রুশ সেনাদের চলমান অভিযানের অগ্রগতি খুব ধীর।

ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধ এবং নিজেদের রসদ সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেওয়ায় রুশ বাহিনী খুব একটা এগোতে পারছে না। আর মস্কোর দাবি, তারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই সবগুলো লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো বলছে, কয়েক দিনের মধ্যেই ইউক্রেন দখল করে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার। দেশটি ইউক্রেনে ভলোদিমির জেলেনস্কি সরকারকে সরিয়ে রুশপন্থী সরকারকে বসাতে চেয়েছিল। তবে চলমান অভিযানের প্রায় এক মাস হতে চললেও রুশ বহর কিয়েভের কাছে স্থবির হয়ে আছে। এমন অবস্থায় কৌশল পরিবর্তনের পথে হাঁটছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, মস্কো এখন কিয়েভকে চাপ দেবে যেন তারা দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করে নেয়।

ভ্লাদিমির পুতিন
রয়টার্স ফাইল ছবি

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ও দনবাস অঞ্চলের দখল নেওয়ার পর এখন পশ্চিমাঞ্চলীয় রাশিয়া ও ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মধ্যে ‘স্থল সেতু’ তৈরি করতে চাইছে রাশিয়া। দনবাস অঞ্চলজুড়ে নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করতে চাইছে দেশটি।
ইউক্রেনের বড় বড় শহরগুলোতে ব্যাপক গোলা বর্ষণ অব্যাহত আছে। একে পুতিনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।

চাপ প্রয়োগের মধ্য দিয়ে পুতিন চাইছেন, ইউক্রেন যেন ন্যাটো কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ না দেয়। দেশটি যেন রাশিয়ার প্রতি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে সম্মত হয় এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে যোগ না দেয়। মার্কিন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার দাবি পূরণে রাজি না হলে ক্রেমলিন রুশ বাহিনীকে বলতে পারে তারা যেন ইউক্রেনের যে অংশগুলো দখল করেছে, সেগুলোর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয়। রাশিয়ার এ ‘প্ল্যান বি’এর কারণে চলমান সংঘাত পরিস্থিতি আরও অনেক সপ্তাহ এমনকি অনেক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

মার্কিন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ আবার মনে করেন, পুতিনের লক্ষ্য পাল্টায়নি, শুধু তাঁর কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের দখল নিতে তিনি যে পরিকল্পনা করেছিলেন, তা কাজে আসেনি। আর সে কারণে কৌশলে পরিবর্তন আনছেন তিনি। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে রুশ সেনারা অবস্থান করছেন। ব্যাপক গোলা হামলাও অব্যাহত আছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিরক্ষাবিষয়ক থিঙ্কট্যাংক রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান মাইকেল ক্লার্ক বলেন, তিনি (পুতিন) সব সময়ই চাইবেন অবস্থান জোরালো করতে, কারণ, তিনি নিজেই এখন ভয়ংকর রকমের জগাখিচুড়ি অবস্থা ও প্রচণ্ড কৌশলগত ভুলের মধ্যে আছেন।

আরও পড়ুন

ইউক্রেনের মারিউপোল ও অন্য শহরগুলোতে রুশ বাহিনী তাদের কিছু দখল কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। ১৯৯৯ সালে গ্রোজনি ও ২০০০ সালে দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধের সময় যে কৌশলগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, তা এখন আর ব্যবহার করা হচ্ছে না।
কয়েক সপ্তাহ ধরে তুমুল লড়াইয়ের পর রুশ বাহিনী বন্দর শহর মারিউপোলের রাস্তায় পৌঁছে যায়। এটি ছিল মস্কোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত লক্ষ্য। কারণ, মস্কো চাইছে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ থেকে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাশিয়া পর্যন্ত একটি করিডর প্রতিষ্ঠা করতে। এ শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মানে হলো রাশিয়ার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হয়েছে। তবে এর চড়া মূল্য চুকাতে হয়েছে তাদের।

ইউক্রেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার পক্ষে মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বেশি। রাশিয়ার অতীতের অন্য অভিযানগুলোর তুলনায় এ যুদ্ধে কম সময়ের মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা বেশি। ২০০৮ সালে জর্জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে প্রথম পাঁচ দিনে রুশ পক্ষের ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে লড়াইয়ে রাশিয়ার পক্ষে প্রায় ১৫ হাজার এবং চেচনিয়ার লড়াইয়ে ১১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার হতাহতের সংখ্যা তাদের মোট যুদ্ধ সক্ষমতার প্রায় ১০ শতাংশ। যুদ্ধে দেশটির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাঁজোয়া যান ও সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের কৌশলগত অস্ত্র সংরক্ষণাগারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তবে সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ন্যাটোর সঙ্গে যদি রাশিয়ার বড় ধরনের যুদ্ধে জড়ানোর প্রয়োজন পড়ে, তবে তাদেরকে এখন অত্যাধুনিক ও দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ সীমিত করতে হবে।