অ্যাপল ডেইলির ভাগ্য নির্ধারণ শুক্রবার
চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী পত্রিকা অ্যাপল ডেইলি চলবে, না বন্ধ হয়ে যাবে সেই সিদ্ধান্ত হবে আগামী শুক্রবার। আজ সোমবার বিবিসির এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
সম্প্রতি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করার অভিযোগ এনে পত্রিকাটির ১ কোটি ৮০ লাখ হংকং ডলার জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশ পত্রিকাটির সম্পাদক ও পাঁচ নির্বাহীকে আটক করে।
সংবাদমাধ্যমটি এখনো টিকে আছে। তবে জব্দ করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে না দিলে এটি বন্ধ হওয়া সময়ের ব্যাপারমাত্র।
আর আগেই পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা ৭৩ বছর বয়সী জিমি লাইকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুই বছর আগে গণতন্ত্রের পক্ষে বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন জিমি। পত্রিকাটি বেইজিংয়ের কট্টর সমালোচক।
পত্রিকাটির অভ্যন্তরীণ কিছু নথি রয়টার্সের হাতে এসেছে। সেখান থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘বোর্ড শুক্রবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে, এটি চলবে, না বন্ধ হয়ে যাবে। যদি বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে ২৬ জুনের পত্রিকা হবে শেষে এডিশন।’
ডেইলি অ্যাপলের উপদেষ্টা মি. সিমন বলেন, ‘টাকা না থাকলে কাজ করা যায় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনার যদি ব্যয় নির্বাহের অর্থ না থাকে, তবে আপনি আপনার কোনো কর্মীকেই অর্থ দেওয়ার কথা দিতে পারেন না। হংকংয়ে এটি অবৈধ।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমটি এখনো টিকে আছে। তবে জব্দ করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে না দিলে এটি বন্ধ হওয়া সময়ের ব্যাপারমাত্র।’
অ্যাপল ডেইলি গতকাল রোববার জানিয়েছিল, তাদের হাতে যে অর্থ আছে, তা দিয়ে পত্রিকার ‘কয়েক সপ্তাহের’ স্বাভাবিক কাজ চালানো যাবে।
গত বৃহস্পতিবার প্রায় ৫০০ পুলিশ কর্মকর্তা পত্রিকাটির হংকং অফিসে অভিযান চালান। বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ সময় পুলিশ প্রধান সম্পাদক ও চারজন নির্বাহীকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। পত্রিকাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ডেইলি লিমিটেড, অ্যাপল ডেইলি প্রিন্টিং লিমিটেড ও অ্যাড ইন্টারনেট লিমিটেডের বড় অঙ্কের সম্পদ জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি সাংবাদিকদের কম্পিউটার পরীক্ষা করে দেখেছে পুলিশ। পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তাদের তল্লাশি ও সাংবাদিককতার উপকরণ জব্দের ক্ষমতা দেওয়া আছে।
শুক্রবার পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ২০১৯ সাল থেকে হংকং এবং চীনের বিরুদ্ধে অবরোধ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কমপক্ষে ৩০টি আর্টিক্যাল প্রকাশ করেছে অ্যাপল ডেইলি।
ওদিকে ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষের অনুমতির বাইরে গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ ও সমর্থনের জন্য একগাদা অভিযোগ আনা হয়েছে পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাইয়ের বিরুদ্ধে।
জিমি লাই গত বছরের ডিসেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর আদালত তাঁকে আর জামিন দেননি। তাঁর বিরুদ্ধে মোট তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে বিতর্কিত এ আইনে।
২০২০ সালের জাতীয় নিরাপত্তা আইনটি পাস করা হয়। এ আইন পাসের পর থেকে হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী অধিকারকর্মীদের ওপর খড়্গহস্ত হয়েছে চীন সরকার। এ আইনে জিমি লাই ছাড়া আরও কয়েকজন অধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার ও সাজা দেওয়া হয়েছে। গত বছর জিমি লাইকে গ্রেপ্তারের পর থেকে আন্তর্জাতিক মহল চীনের সমালোচনা করছে। কিন্তু চীন জিমি লাইকে একজন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।