সন্তান লালন-পালনে অনীহা বাবাদের, ৬০ বছরে প্রথম কমল চীনে জনসংখ্যা

নতুন পরিসংখ্যানকে চীনে নাগরিকের সংখ্যা কমতে থাকার ঐতিহাসিক সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে
ছবি: রয়টার্স

ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমেছে। এই ঘটনাকে একটি দীর্ঘ সময় ধরে দেশটির নাগরিকের সংখ্যা কমতে থাকার ঐতিহাসিক সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। চীন ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এই ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।

চীনে ১৯৬১ সালের পর সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটল। ওই বছরটি ছিল দেশটির মহা দুর্ভিক্ষের শেষ বছর। চীনের জনসংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে এ বছরই ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, ২০২২ সালের শেষে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার কমে ১৪১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজারে নেমে গেছে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে ২০৫০ সাল নাগাদ চীনের জনসংখ্যা ১০ কোটি ৯০ লাখের মতো কমতে পারে। ২০১৯ সালে করা পূর্বাভাসের চেয়ে এই হ্রাসের সংখ্যা তিন গুণের বেশি।

আরও পড়ুন
সন্তান লালন-পালনে পুরুষের যথাযথ দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
ছবি: রয়টার্স

কেন কমছে জনসংখ্যা

চীনের জনসংখ্যা কমে যাওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চাপিয়ে দেওয়া এক সন্তান নীতি। পাশাপাশি শিক্ষার আকাশ ছোঁয়া ব্যয়ের কারণেও একটির বেশি সন্তান নেননি অনেক নাগরিক। এমনকি কেউ কেউ কোনো সন্তানই নেননি।

গতকাল জনসংখ্যার নতুন পরিসংখ্যান প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল। ‘সন্তান নেওয়া কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ?’—এমন একটি হ্যাশট্যাগ চালু হয়েছে, যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

জয়ফুল নেড নামের একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘নারীরা যে কারণে সন্তান নিতে চান না, সে মূল কারণটার জন্য তাঁরা দায়ী নন। বরং সেটার জন্য দায়ী সন্তান লালন-পালনে সমাজ এবং পুরুষের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যর্থতা। যেসব নারী সন্তান জন্ম দেন, তাঁদের জীবনযাপনের মান ও আধ্যাত্মিক জীবনবোধ মারাত্মকভাবে কমে যায়।’

আরও পড়ুন
চীনের কঠোর শূন্য কোভিড নীতিও জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে
ছবি: রয়টার্স

জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তিন বছর ধরে চলে চীনের কঠোর শূন্য কোভিড নীতিও জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। করোনার কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়া অনেক চীনা নাগরিক সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

এ ছাড়া চীনের হাসপাতালগুলোয় করোনা রোগীর চাপে শিশু ও মায়েরা চিকিৎসা নিতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। এ অবস্থায়ও কেউ কেউ সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৩১ বছর বয়সী ঝ্যাং কি বলেন, ‘শুনেছি সরকারি হাসপাতালগুলোয় সন্তানের জন্মদান ভয়াবহ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে সন্তান নেব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

জন্মহার বাড়ানোর জন্য ২০২১ সাল থেকে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে চীন সরকার। সন্তান বেশি নিতে উৎসাহী করার জন্য করহার কমানো, মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় বাড়ানো, স্বাস্থ্যবিমায় সুবিধা বাড়ানো, বাড়ি কেনা, নির্মাণে প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এসব পদক্ষেপের প্রভাব এখনো পড়তে শুরু করেনি।

জনসংখ্যাবিদ সি ফুশিয়ান বলেন, ‘বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়লে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হবে; রাজস্ব কমবে, বাড়বে ঋণ। চীন ধনী হওয়ার আগেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছে।’