যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময় উড়োজাহাজে চড়েছেন, কারণ কী

বিশ্বে প্রতিদিন এক লাখের বেশি ফ্লাইট ওঠানামা করে। সান মারিনো ও মাল্টার মতো কিছু ছোট দেশ আছে, যেখানে শুধু একটি বিমানবন্দর আছে। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো বড় দেশগুলোতে বিমানবন্দরের সংখ্যা কয়েক হাজার। এমনকি এসব দেশের কোনো কোনো শহরে পাঁচটি পর্যন্ত বিমানবন্দর আছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বিমানবন্দর থাকা দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস। তালিকায় থাকা দেশগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, কানাডা, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স।

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

সিআইএ ফ্যাক্টবুকের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ হাজার ৮৭৩টি বিমানবন্দর আছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল আয়তনের কারণে ভ্রমণকারীদের অনেকেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে উড়োজাহাজে চলাচল করে থাকেন। মার্কিন নাগরিকদের ৯০ শতাংশই জীবনের কোনো না কোনো সময় উড়োজাহাজে ভ্রমণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে সরকারি বিমানবন্দরের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কিছু বেশি। অন্য বিমানবন্দরগুলো বেসরকারি। ২০২৩ সালের এক হিসাব অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর হলো হার্টসফিল্ড–জ্যাকসন আটলান্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

ব্রাজিল

ব্রাজিলের সাও পাওলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

সবচেয়ে বেশি বিমানবন্দরের দেশের তালিকায় ব্রাজিলের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশটিতে ৪ হাজার ৯১৯টি বিমানবন্দর আছে। এসব বিমানবন্দরের বেশির ভাগই বেসরকারি। সরকারি বিমানবন্দরের সংখ্যা ৫০০টিরও কম। যুক্তরাষ্ট্রের মতো করে ব্রাজিলেও বিমানবন্দর বেশি হওয়ার একটি কারণ হলো, দেশটির আয়তন বেশি। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। ব্রাজিলের আয়তন ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৭৭০ বর্গকিলোমিটার। সাও পাওলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো ব্রাজিলের ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান তৃতীয়। তবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলের তুলনায় এখানকার বিমানবন্দরের সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম দেশ। অস্ট্রেলিয়ার আয়তন ৭৭ লাখ ৪১ হাজার ২২০ বর্গকিলোমিটার। দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল পার্থ থেকে বিরতিহীনভাবে গাড়ি চালিয়ে পূর্ব উপকূলীয় ব্রিসবেনে যেতে প্রায় ৪৬ ঘণ্টা সময় লাগে। সড়কপথে এত সময় লাগার কারণে দেশটিতে উড়োজাহাজে ভ্রমণ জরুরি হয়ে পড়ে। ২০২৩ সাল নাগাদ হিসাব অনুযায়ী, সিডনি বিমানবন্দর দেশটির সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

মেক্সিকো

মেক্সিকোর কানকুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিমানবন্দরের দেশের তালিকায় মেক্সিকোর অবস্থান চতুর্থ। দেশটিতে বিমানবন্দরের সংখ্যা ১ হাজার ৪৮৫টি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত করা হিসাব অনুযায়ী, মেক্সিকো সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলো দেশটির সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ওই বছর ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার যাত্রী এ বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছেন। বিমানবন্দরের সংখ্যার দিক থেকে মেক্সিকো শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে থাকলেও দেশটির নাগরিকদের মাত্র ৩০ শতাংশ জীবনের কোনো না কোনো সময় উড়োজাহাজে চলাচল করেছেন।

কানাডা

কানাডার পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিমানবন্দরের দিক থেকে তালিকায় কানাডার অবস্থান পঞ্চম। সেখানকার বিমানবন্দরের সংখ্যা ১ হাজার ৪২৫টি। চতুর্থ অবস্থানে থাকা মেক্সিকোর তুলনায় এখানকার বিমানবন্দরের সংখ্যা ৬০টি কম। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচলের ক্ষেত্রে উড়োজাহাজ ভ্রমণ জরুরি হয়ে পড়ে। দেশটির আয়তন ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার ৬৭০ বর্গকিলোমিটার। অবশ্য বেশিসংখ্যক বিমানবন্দর থাকা সত্ত্বেও দেশটির চারটি বিমানবন্দরে সবচেয়ে বেশি উড়োজাহাজ চলাচল হয়ে থাকে। ২০২৩ সালের হিসাব অনুসারে, টরন্টোর লেস্টার বি পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশটির সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দর
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিমানবন্দরের দেশের তালিকায় যুক্তরাজ্যের অবস্থান ষষ্ঠ। তবে ওপরে উল্লিখিত দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বিষয় হলো, এটি আয়তনে ছোট দেশ। যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৪৩টি বিমানবন্দর আছে। এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৮০ লাখ। আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও পর্যটনের কেন্দ্রস্থল হওয়ার কারণেই হয়তো এখানকার বিমানবন্দরের সংখ্যাটা বেশি রাখতে হয়েছে। শুধু লন্ডনেই ৬টি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। এর পাশাপাশি ছোটখাটো বিমানবন্দর তো আছেই। যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর হলো লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর।

রাশিয়া

রাশিয়ার শেরেমেতইয়েভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিমানবন্দরের দেশের তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান সপ্তম। দেশটি জুড়ে ৯০৪টি বিমানবন্দর আছে। আয়তনেও রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম দেশ। এটির আয়তন ১ কোটি ৭০ লাখ ৯৮ হাজার ২৪২ বর্গকিলোমিটার। এতেই বোঝা যায়, দেশটিতে বিমানবন্দরের সংখ্যা বেশি হওয়া কতটা জরুরি।  রাশিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর হলো শেরেমেতইয়েভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ১৮ মাইল উত্তরে এর অবস্থান। শেরেমেতইয়েভো ছাড়াও মস্কোয় আরও ৪টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে।

জার্মানি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

জার্মানিতে বিমানবন্দরের সংখ্যা ৮৩৮টি। সবচেয়ে বেশি বিমানবন্দরের দিক থেকে বিশ্বে জার্মানির অবস্থান অষ্টম। মধ্যাঞ্চলীয় ইউরোপে অবস্থিত দেশটি অন্য ইউরোপীয় দেশের পাশাপাশি আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার মতো মহাদেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি প্রধান কেন্দ্র। জার্মানির সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর হলো ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জার্মানিতে উড়োজাহাজের যাত্রী সংখ্যা কমেছে। কারণ, অনেক জার্মান নাগরিক পরিবেশগত প্রভাব কমাতে উড়োজাহাজের পরিবর্তে ট্রেন বেছে নিচ্ছেন।

আর্জেন্টিনা

সবচেয়ে বেশি বিমানবন্দরের দেশের তালিকায় আর্জেন্টিনার অবস্থান নবম। দেশটিতে ৭৫৬টি বিমানবন্দর আছে। আয়তনের দিক থেকে আর্জেন্টিনা বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। বিশাল স্থলভাগের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে সেখানকার উড়োজাহাজব্যবস্থাকে বিস্তৃত করতে হয়েছে। দেশটির বুয়েনস এইরেসের দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইট চলাচল করে থাকে। ২০২৩ সালের এ দুই বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া হয়েছে।

১০

ফ্রান্স

ফ্রান্সে বিমানবন্দরের সংখ্যা ৬৮৯টি। সবচেয়ে বেশি বিমানবন্দরের দেশের তালিকায় ফ্রান্সের অবস্থান দশম। শুধু ২০২৩ সালে ফ্রান্সে ১০ কোটি দর্শনার্থী ভ্রমণ করেছেন। দর্শনার্থী ও পর্যটকদের প্রচুর ভ্রমণের কারণে সেখানকার উড়োজাহাজ, রেল ও সড়কপথের অবকাঠামো বিস্তৃত করতে হয়েছে। প্যারিসের শার্লে দ্য গল বিমানবন্দর হলো ফ্রান্সের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ২০২৩ সালে ৬ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার দর্শনার্থী এ বিমানবন্দর হয়ে যাতায়াত করেছেন।