চলতি বছরে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ক্ষমতাধর দেশ

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষমতা বহুমুখী। ক্ষমতা গড়ে ওঠে রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থনৈতিক সম্পদ আর সামরিক শক্তি দিয়ে। একটি দেশ কতটুকু ক্ষমতাধর, তা নির্ভর করে দেশটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব, আন্তর্জাতিক জোটগত শক্তি এবং সামরিক দক্ষতার ওপর। ২০২৫ সালে বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে শীর্ষ ১০ ক্ষমতাধর দেশের তালিকা তৈরি করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইউএস নিউজ।
কোনো দেশের ক্ষমতার পরিচয় হিসেবে সংবাদমাধ্যমটি পাঁচটি বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্যে দেশগুলোর প্রাপ্ত নম্বরের সুষম গড় করে সেটার ভিত্তিতে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে ক্ষমতার ক্রম নির্ণয় করা হয়েছে।

বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে—নেতা, অর্থনৈতিক প্রভাব, রাজনৈতিক প্রতিপত্তি, শক্তিশালী আন্তর্জাতিক জোটভুক্তি ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। তালিকটি দেখা যাক।

যুক্তরাষ্ট্র

ওয়াশিংটনে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের সামনে উড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। প্রযুক্তি, অর্থব্যবস্থা (ফিন্যান্স), বিনোদনসহ বহু খাতে দেশটির নেতৃত্ব জারি আছে। বাইডেন প্রশাসন অবকাঠামো উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উদ্যোগে মনোযোগী হয়েছে।

অন্যদিকে বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানির অবস্থান এই দেশে। এটা বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পোক্ত অবস্থানকে সহায়তা করছে।

চীন

চীনের পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চলতি বছর বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন। দেশটির ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নামে পরিচিতি উদ্যোগটি ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে। এতে অংশ নেওয়া দেশের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য স্থল ও সমুদ্রপথে এশিয়াকে আফ্রিকা ও ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাণিজ্য বাড়ানো।
এর বাইরে চীন প্রযুক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পঞ্চম প্রজন্মের সেলুলার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভ–জিতে। প্রযুক্তিতে এক বিশ্বনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশটি।

রাশিয়া

রাশিয়ার পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও সামরিক সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাশিয়া বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। দেশটি তার মহাকাশ কর্মসূচির ব্যাপারেও মনোযোগ দিচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি মহাকাশ অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভেনেরা-ডি ভেনাস ল্যান্ডার। রুশ অভিযানগুলোর লক্ষ্য চাঁদ এবং মহাকাশের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো অনুসন্ধান করা, যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের আরও বিশদ ধারণা পেতে সাহায্য করবে।

যুক্তরাজ্য

এলিজাবেথ টাওয়ারের সামনে উড়ছে যুক্তরাজ্যের পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

নতুন অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি ও আলাপ-আলোচনার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি শিল্পেও দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে। লন্ডন নবীন উদ্যোগের (স্টার্টআপ) প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই উদ্যোগগুলো নানা খাতে উদ্ভাবনী সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে, যা যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

জার্মানি

জার্মানির আইনসভার নিম্নকক্ষের বাইরে উড়ছে দেশটির পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবুজ জ্বালানি উদ্যোগগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছে জার্মানি। দেশটি প্রথাগত জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার বাড়ানো এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর দিকে মনোযোগী হয়েছে। এ ছাড়া শিল্পোৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা খাতে ডিজিটাল রূপান্তরেও মনোযোগ দিচ্ছে দেশটি। উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এটা তারা করছে।

দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন খাতে দক্ষিণ কোরিয়া এ বছরও এক বিশ্বনেতা হয়ে রয়েছে। দেশটিতে রয়েছে বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে এর শক্তিশালী অবস্থানকে সহায়তা করছে। সবুজ জ্বালানি উদ্যোগ সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়া কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াচ্ছে।

ফ্রান্স

ফ্রান্সের পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ডিজিটাল রূপান্তর ও সবুজ জ্বালানি উদ্যোগগুলোতে মনোযোগ দিচ্ছে ফ্রান্স। দেশটি তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক করা এবং জ্বালানি হিসেবে নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি ও আইন-বিধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে দেশটি এই জোটের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখছে।

জাপান

জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে উড়ছে দেশটির পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

গাড়ি ও ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত জাপান বিশ্বের চতুর্থ-বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। প্রযুক্তির আগামী ধারায় নিয়ামক ভূমিকা রাখতে দেশটি এখন [কম্পিউটারের] চিপ উৎপাদন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। তবে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং মোট জনসংখ্যা হ্রাসের চাপে আছে এই দেশ। এর ফলে একদিকে যেমন মেধার সংকট দেখা দিচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে মজুরি বাড়ানোর চাহিদা তৈরি হচ্ছে।

সৌদি আরব

সৌদি আরবের পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

পেট্রোলিয়াম উৎপাদনই এখনো সৌদি আরবের সম্পদ ও ক্ষমতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। দেশটির জ্বালানি তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৪ হাজার ৮৮ কোটি ডলার আয়ের হিসাব দিয়েছে। তবে একই সঙ্গে মুনাফা ২৫ শতাংশ কমে যাওয়ার কথাও তারা বলেছে।

বিশ্বের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সুনিশ্চিত মজুতের ১৭ শতাংশই রয়েছে সৌদি আরবের হাতে, পরিমাণে যা প্রায় ২৭ হাজার কোটি ব্যারেল। আরব দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় সৌদি আরব আঞ্চলিক ওপেকভুক্ত দেশগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করছে।

পর্যটক ও বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য সৌদি আরব বড় বড় প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করছে। দেশটিতে ২০৩৪ সালের ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ারও কথা রয়েছে।

১০

ইসরায়েল

ইসরায়েলের পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্ব পর্যায়ে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে কাজ করা কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানি রয়েছে দেশটিতে। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নীতির ওপরও মনোযোগ দিচ্ছে।