শ্রীলঙ্কায় হামলাকারী ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন
শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ হামলাকারীরা ভারত সফর করেছিলেন। আর এ সফরের উদ্দেশ্য হলো সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা। শ্রীলঙ্কার সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহেশ সেনানায়েকে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন।
মহেশ সেনানায়েকে বলেন, সম্ভবত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ‘প্রশিক্ষণ নিতে’ হামলাকারীরা ভারত সফর করেছিলেন। তাঁরা ভারতের কাশ্মীরে, বেঙ্গালুরুতে ও কেরালায় গিয়েছিলেন। হামলাকারীদের সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য আছে এতটুকু। তবে সেখানে যাওয়ার তাঁদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল, তা অজানা বলেও জানান তিনি।
বিবিসির সাক্ষাৎকারে মহেশ সেনানায়েকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভারত হামলার আশঙ্কায় গোয়েন্দা তথ্য জানানোর পরও কেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়নি শ্রীলঙ্কা? এর জবাবে সেনানায়েকে বলেন, সরকারের মধ্যে বোঝাপড়ায় একটা ফারাক হয়তো ছিল। বিষয়টি সবাই এখন জানেন।
ভয়াবহ হামলা হতে পারে, শ্রীলঙ্কাকে এ বিষয়ে সতর্ক করছিল ভারত। প্রথম দফায় ৪ এপ্রিল এমন সতর্কতা পাঠানো হয়। বলা হয়, আত্মঘাতী হামলা হতে পারে খুব অল্প সময়ের মধ্যে। দ্বিতীয় দফায় ইস্টার সানডে হামলার আগের দিন শনিবার সতর্ক করা হয়। তাতে সম্ভাব্য লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়। প্রথম আত্মঘাতী হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করে ভারত। এসব সতর্কতার কথা স্বীকার করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণে ২৫৩ জন নিহত হয়েছে। আহত অন্তত ৫০০ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৯ জন বিদেশি নাগরিক। হামলার তিন দিন পর আইএস হামলার দায় স্বীকার করে। তবে দায় স্বীকার করলেও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি। দ্বীপদেশটিতে এ হামলায় জড়িত সন্দেহে ১০০ জনকে আটক করেছে।
হামলার আগে ভারত দুবার শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এই ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকেই দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। তাঁর দাবি, বিক্রমাসিংহের আমলেই শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থা দুর্বল হয়েছে। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সময় অভিযুক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের বিচারে সব মনোযোগ দেওয়ায় শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দুর্বল হয়ে গেছে।
এর আগে বলা হয়েছিল, শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত একজন দুবার ভারত সফরে গিয়েছিলেন। তবে ভারত ওই আত্মঘাতী হামলাকারীর সফরের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। নয়জন আত্মঘাতী হামলাকারীর একজন মোহাম্মদ মোবারক আজান। তিনি ২০১৭ সালে দুবার ভারতে এসেছিলেন।
শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রীলঙ্কার গির্জা ও হোটেলে আক্রমণকারীদের মধ্যে দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন মোবারক আজান। তিনি হামলার দিন বোমায় নিজেকে উড়িয়ে দেন। অপর হামলাকারী হলেন জাহরান হাশিম। তিনি দেশটির উগ্রপন্থী ইসলামি গোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামায়াতের (এনটিজে) নেতা। তিনি এই হামলার প্রধান সন্দেহভাজন। হাশিম ২০১৪ সালে কাত্তানকুদিতে এনটিজে প্রতিষ্ঠা করেন। হাশিমও ভারতের কেরালা ও তামিলনাড়ুতে গেছেন।
শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ এখনো বাকি আত্মঘাতী হামলাকারীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে পারেনি।
শ্রীলঙ্কার পুলিশ বলেছে, হামলাকারী সবাই শ্রীলঙ্কান। তারা নয়জন হামলাকারীর মধ্যে একজন নারীকে শনাক্ত করেছে। ওই নারীর নাম ফাতিমা ইবরাহিম। তিনি শ্রীলঙ্কার কোটিপতি ব্যবসায়ী ইনসাফ আহমদ ইবরাহিমের স্ত্রী।