লিঙ্গ সমতায় আরও পেছাল জাপান
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বলে আসছেন, তিনি দেশটিকে এমন এক সমাজে পরিণত করবেন, যেখানে নারী উজ্জ্বলতা নিয়ে আলো ছড়ায়। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জাপানকে ক্রমাগত সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছিল।
এই বিড়ম্বনা থেকে দেশকে বের করে আনতেই ওই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আবে। ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে আবে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। কিন্তু তাঁর অঙ্গীকার অনুযায়ী লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি এখনো নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, এ ক্ষেত্রে জাপান বরং উল্টো পথে হাঁটছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বছর শেষে লিঙ্গ সমতা নিয়ে নিয়মিতভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এই প্রতিবেদনের সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। এতে দেখা যায়, ১৫৩টি দেশের মধ্যে লিঙ্গ সমতার সার্বিক হিসাবে জাপানের অবস্থান ১২১।
এক বছর আগে জাপান ছিল ১১০ নম্বরে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে জাপানের এত বড় পতন আগে দেখা যায়নি। এর জন্য মূলত দায়ী হচ্ছে রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নে জাপানের ক্রমেই পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি।
জাপানের সংসদের নিম্নকক্ষে নারীর প্রতিনিধিত্বের হার ১০ দশমিক ১ শতাংশ। গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী আবে তাঁর নতুন যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন, সেখানে নারী প্রতিনিধিত্ব সংকুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে জাপানের অবস্থান নেমে গেছে।
অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগের দিক থেকে অবশ্য আগের চেয়ে সামান্য এগিয়েছে জাপান। গত বছরের প্রতিবেদনে জাপানের অবস্থান ছিল ১১৭। এখন সেই অবস্থান ১১৫। অর্থনৈতিক খাতে নেতৃত্বের অবস্থানে নারীর অংশীদারত্ব জাপানে মাত্র ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও গড় আয়ুর দিক থেকে জাপানের নারীরা যথেষ্ট শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন। তাই এই খাতে তাদের অবস্থানগত পরিবর্তন দেখা যায়নি।
লিঙ্গ সমতার দিক থেকে পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ যে খুব ভালো করতে পেরেছে, তা নয়। সার্বিক হিসাবে তালিকায় চীনের অবস্থান ১০৬ নম্বরে। দক্ষিণ কোরিয়া ১০৮। সেই তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া বেশ এগিয়ে। ৫০তম অবস্থান নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশ ১০০-এর মধ্যে নেই।
রাজনীতির দিক থেকে লিঙ্গ সমতা অর্জনে জাপানের ব্যর্থতা প্রধানমন্ত্রী আবের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনকে দুরূহ করে তুলছে। একই সঙ্গে সার্বিক অবস্থানগত দিক থেকেও জাপানকে নিচের দিকে নামিয়ে আনছে। ফলে জাপানের সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনের দাবি বেশ জোরালো হয়ে উঠছে। তবে সেটাকে সমাধানের সঠিক পথ অনেকেই মনে করছেন না। বরং নারীদের রাজনীতিতে আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে পারার মতো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।