রাখাইনে বিদ্রোহীদের হামলায় ১৩ পুলিশ নিহত
মিয়ানমারের রাখাইনে রাজ্যে সশস্ত্র জাতিগত বিদ্রোহীদের হামলায় দেশটির ১৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকালে এই হামলা চালানো হয়।
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে গত মাসের শুরু থেকে উত্তেজনা আবার বেড়েছে। এই সময় থেকে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই জোরদার হয়েছে। রাজ্যটিতে সংখ্যালঘু রাখাইন বৌদ্ধদের আরও স্বায়ত্তশাসন চান এই গোষ্ঠীর সদস্যরা।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইন থু খা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তাঁদের সশস্ত্র সদস্যরা রাজ্যে চার পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছেন এবং পরে ‘শত্রুদের’ লাশ উদ্ধার করেছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ জন সদস্যকেও আটক করেছেন তাঁরা। তাঁদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের ক্ষতি করা হবে না।
মুখপাত্র বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানের জবাবে শুক্রবার পুলিশ ফাঁড়িতে ওই হামলা চালানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর অভিযানে বেসামরিক লোকজনকেও নিশানা বানানো হয়।
গত মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জাতিগত স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে লড়াইয়ে লিপ্ত একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে চার মাসের এক অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে। তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করাই ছিল এ ঘোষণার লক্ষ্য। কিন্তু রাখাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে এই ঘোষণার আওতায় আনা হয়নি।
শুক্রবার সর্বশেষ হামলার ঘটনাটির আগে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে মঙ্গলবার আরাকান আর্মির সদস্যদের হামলায় এক পুলিশ সদস্যের গুরুতর আহত হওয়ার খবর প্রকাশ করা হয়েছিল।
এদিকে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জ মিন তুন রয়টার্সকে বলেছেন, শুক্রবারের হামলার জবাব দেওয়া শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় বুথিডং ও মংডুর চারটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ওই এলাকায় সেনাবাহিনী তাদের শুরু করা অভিযান চালিয়ে যাবে। বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির হামলায় ঠিক কতজন নিহত ও আটক হয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আরও বলেন, পুলিশ ফাঁড়িগুলো রাখাইনের জাতীয় নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের সুরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। তাই তাতে হামলা করা ঠিক হয়নি। যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতার ৭১ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে যখন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছিল, তার কয়েক মিনিট আগে বৌদ্ধ বিদ্রোহীরা ওই হামলা শুরু করে।
তবে আরাকান আর্মি বলেছে, দেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের সঙ্গে এ হামলার কোনো সম্পর্ক নেই।
এর আগে ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে সশস্ত্র হামলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নেমে আসে নিষ্ঠুর নির্যাতন-নিপীড়ন। নিরাপত্তা বাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইন বৌদ্ধদের হামলায় প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখের বেশি নারী-পুরুষ। দমন অভিযানকালে রাজ্যটিতে রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রাম ও শত শত বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ধর্ষণের শিকার হন বহু নারী ও কিশোরী।