শ্রীলঙ্কায় গত রোববার ইস্টার সানডের সকালে আট জায়গায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতদের মধ্যে রমেশ রাজু (৪০) একজন। তাঁকে এখন জাতীয় বীর হিসেবে স্মরণ করছে শ্রীলঙ্কার মানুষ। কারণ, রমেশের বীরত্বের কারণেই হামলার শিকার একটি গির্জার ভেতর থাকা প্রায় ৬০০ লোক বেঁচে যান।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো, পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নেগোম্বো ও পূর্বাঞ্চলীয় বাত্তিকালোয়ায় তিনটি গির্জায় হামলা হয় সেদিন। একই সময় কলম্বোয় তিনটি বিলাসবহুল হোটেলেও হামলা হয়। এ ছাড়া পুলিশের অভিযানের সময় আরও দুই জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটে। এসব হামলায় ২৫৩ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হন।
রমেশ বাত্তিকালোয়ার বাসিন্দা। শহরটি এখন রমেশের পোস্টার ও আলোকচিত্রে ছেয়ে গেছে। ঘটনার দিন তিনি জায়ন গির্জায় ইস্টার সানডের অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছিলেন। গির্জায় তখন উপচে পড়া ভিড়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, একজন অপরিচিত লোক দুটি ব্যাগ নিয়ে জায়ন গির্জায় যান। এ সময় রমেশ তাঁকে গির্জার প্রধান ফটকে আটকে দেন। তিনি ওই লোকের পরিচয় জিজ্ঞেস করেন, ব্যাগ দুটি বাইরে রেখে গির্জায় ঢুকতে বলেন। এ নিয়ে শুরু হয়ে যায় বাগ্বিতণ্ডা। এরই মধ্যে হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয় আগন্তুকের ব্যাগে থাকা বোমা। নিহত হন রমেশসহ ২৯ জন। নিহতদের মধ্যে ১৪টি শিশুও রয়েছে। তবে বেঁচে যায় গির্জার ভেতর থাকা প্রায় ৬০০ মানুষ।
জায়ন গির্জায় রোববার সাপ্তাহিক বাইবেল শিক্ষার সানডে স্কুলের অনেক শিশু সেদিন ইস্টারের প্রার্থনায় যোগ দিয়েছিল। রাজুর স্ত্রী ওই সানডে স্কুলেরই শিক্ষক। দুই সন্তান ও বিধবা স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিতে এখন শুভাকাঙ্ক্ষীর বন্যা বয়ে যাচ্ছে রমেশের বাড়িতে।
শ্রীলঙ্কায় সেদিন যে তিন গির্জায় হামলা হয়, সেগুলোর মধ্যে জায়ন গির্জায় হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে কম। এর কৃতিত্ব রমেশেরও বলে মানছেন সবাই। হামলাকারীকে তিনি আটকে না দিলে সেদিন হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যেত।
রাজুর বাবা ভেলুসামি রাজু (৬৩) বলেন, ‘রমেশ হামলাকারীকে প্রথমে দেখেছিল। সে নিজে নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে পারত। আমি হলেও হয়তো তা-ই করতাম।’
সেদিনের হামলায় রমেশের ছোট বোনও নিহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন বোনের স্বামী ও ২০ মাস বয়সী ভাগনেও।
রমেশের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাঁরা রমেশের কফিনে স্যালুট করেন।