মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি, নিহত ৬
মিয়ানমারে জান্তা শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দিন দিন জোরালো হচ্ছে। সঙ্গে দমন–পীড়নও জোরদার করছে নিরাপত্তা বাহিনী। আজ রোববার দেশটির বিভিন্ন স্থানে কারাবন্দী অং সান সু চির মুক্তি এবং সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নিতে রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো লোক। নিরাপত্তা বাহিনীও বিক্ষোভকারীদের দমনে এদিন বেশি সহিংস হয়ে ওঠে। তাদের ছোড়া গুলিতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। খবর এএফপির।
১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই বিক্ষোভ ও দমন–পীড়ন চলছে। কিন্তু এক দিনে এত প্রাণহানি এর আগে ঘটেনি।
এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে দুজন নিহত হন। এক দিন আগেই ১৯ ফেব্রুয়ারি জান্তা শাসনবিরোধী এই বিক্ষোভে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মিয়া থোতে থোতে খায়ং (২০) নামের একজন বিক্ষোভকারী রাজধানী নেপিডোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। তবে এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চি সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার হন সু চিসহ তাঁর দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এরপর থেকেই রাজপথে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমাতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেনাসদস্য মোতায়েন ও বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটছে।
বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও রাবার বুলেট ছোড়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ।
তবে গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর বলপ্রয়োগ জোরদার করেছে জান্তা শাসকেরা। এমন দমনপীড়ন উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় অনলাইনে বিক্ষোভের ডাকে সাড়া দিয়ে আজ সকালে দেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তায় মানুষের ঢল নামে।
হাসপাতাল সূত্র ও স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আজ দাওয়েই, ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয় শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে ছয়জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন মারা যান দাওয়েই শহরে। বাকি দুজন মারা যান অন্য দুই শহরে।
পায় জ হেইন নামের একজন উদ্ধারকর্মী এএফপিকে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় দাওয়েই শহরে তিনজন নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে নিহত হন। ২০ জনের মতো আহত হন রাবার বুলেটে। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। স্থানীয় গণমাধ্যম দাওয়েই ওয়াচ ওই শহরে তিনজন নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে।
ইয়াঙ্গুনেও বড় বিক্ষোভ হয়েছে। এখানে শিক্ষকদের একটি বিক্ষোভে হস্তক্ষেপ করে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে একজন নারী শিক্ষক নিহত হন। তবে তিনি ঠিক কীভাবে নিহত হয়েছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ইয়াঙ্গুনের উপকণ্ঠের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক অ্যামি কিয়াও (২৯) ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভে নামামাত্র পুলিশ গুলি চালানো শুরু করে। তারা সতর্ক করতে টু শব্দটিও উচ্চারণ করেনি। গুলিতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় কিছু বিক্ষোভকারী আশপাশে বাড়িঘরে আশ্রয় নেন।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা কিছু দৃশ্যে দেখা যায়, ইয়াঙ্গুনের রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছেন। আর উত্তরে মান্দালয় শহরে জলকামান ব্যবহার করছেন তাঁরা।
সেনাশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে এই বিক্ষোভের পাশাপাশি মিয়ানমারে অসহযোগের ডাক দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। অসহযোগের প্রতি সমর্থন দিন দিন জোরালো হচ্ছে। প্রথমে অসহযোগ শুরু করেন চিকিৎসকেরা। পরে শিক্ষকসহ অন্য পেশাজীবী ও সরকারি কর্মচারীরা এতে যোগ দিচ্ছেন।