নতুন সরকারের কথা বলেও আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হলেন গোতাবায়া
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাতের দেওয়া ভাষণ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ওই ভাষণে তিনি পদত্যাগ করার আহ্বান উপেক্ষা করেন। সরকারব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার শপথের কথাও জানান। খবর বিবিসির।
তবে গোতাবায়া রাজাপক্ষের এসব পরিকল্পনা আশ্বস্ত করতে পারেনি শ্রীলঙ্কাবাসীকে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাজাপক্ষে বলেন, তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এই নিয়োগ দেবেন তিনি। সেই সঙ্গে নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করবেন।
গোতাবায়া রাজাপক্ষে বলেন, তিনি ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার গঠনের জন্য অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন। তবে কোন রাজনৈতিক দলগুলো একত্র হয়ে এ ধরনের সরকার গঠন করবে, সে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। প্রধান বিরোধী দল বলেছে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হবে না।
শ্রীলঙ্কানরা যা বলছেন
গত মাসে শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো ভাষণ দিলেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে। তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার কিছু অংশ পার্লামেন্টের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে কোনো সময়সীমার কথা বলেননি।
শ্রীলঙ্কার চরম অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশটির জনগণ গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে পদত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানান। দেশটির অনেকে বলছেন, গোতাবায়া তাঁর ভাষণে আসল সমস্যা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন।
কলম্বোতে বিক্ষোভকারী কাভিন্দা থেননাকুন গোতাবায়াকে উদ্দেশ্য করে বিবিসির কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি গত এক মাস কোথায় ছিলেন? মানুষের কাছে ওষুধ–খাবার ছিল না। পুরো দেশ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ছিল।’ থেননাকুন আরও বলেন, ‘গোতাবায়া যে সংস্কারের কথা বলছেন, আমাদের এর কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের এখন যা প্রয়োজন, তা হলো গোতাবায়ার পদত্যাগ। কিন্তু গোতাবায়া তা বুঝতে না পারায় আমি ব্যথিত।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করে গোতাবায়ারও পদত্যাগ চেয়েছেন। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার সকালে একজন টুইটে বলেন, ‘একজন সরে গেছেন। আমরা চাই আরেকজনও সরে দাঁড়াক।’
আরও এক ব্যক্তি টুইটে গোতাবায়ার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার উচিত ছিল আপনার মন্ত্রীদের ও আপনার ভাই মাহিন্দাকে সন্ত্রাস দমনে উৎসাহিত করা। যদি এমনটা করতেন, তাহলে শ্রীলঙ্কায় এমন সহিংসতার অভিজ্ঞতা হতো না।’
আপনি গত এক মাস কোথায় ছিলেন? মানুষের কাছে ওষুধ–খাবার ছিল না। পুরো দেশ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ছিল।কলম্বোতে বিক্ষোভকারী কাভিন্দা থেননাকুন
শ্রীলঙ্কায় যা ঘটছে
শ্রীলঙ্কার সরকারের বিরুদ্ধে চলা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ স্থানীয় সময় গত সোমবার হঠাৎ সহিংস রূপ নেয়। মাহিন্দা রাজাপক্ষের সমর্থকেরা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানোর পরই এই বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। সহিংস বিক্ষোভের মুখে মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করেন।
জনরোষের মুখে পড়া শ্রীলঙ্কার রাজনীতিবিদেরা এখন বিপদে রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই জনসমক্ষে আসছেন না। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বাসভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ার মেয়র সালমান লাল ফার্নান্দো এবং এমপি সনাত নিশান্ত, রমেশ পাথিরানা, মাহিপালা হেরাথ, থিসা কুত্তিয়ারাচ্চি ও নিমল লাঞ্জার সরকারি বাসভবনও পুড়িয়ে দিয়েছেন।
গোতাবায়া রাজাপক্ষে সরকারবিরোধী এসব বিক্ষোভের কেবল নিন্দা জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেননি। শ্রীলঙ্কায় আজ সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। বিকেলে আবার কারফিউ জারি করা হবে।
শ্রীলঙ্কার মানুষের কেন এত ক্ষোভ
শ্রীলঙ্কায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের সংকট চরমে। রুপির মানও পড়ে গেছে। দেশটির সরকার এমন পরিস্থিতির জন্য করোনাভাইরাস মহামারিকে দায়ী করেছে। শ্রীলঙ্কার পর্যটন–বাণিজ্যেও ধস নেমেছে। এটি দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস ছিল।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই সংকটের জন্য অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন। রাজাপক্ষের পরিবারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, রাজাপক্ষে নিজের ও আত্মীয়দের অর্থনৈতিক লাভের জন্য দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের পথ প্রশস্ত করেছেন।
শ্রীলঙ্কার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় গোতাবায়া রাজাপক্ষের ভাই ও স্বজনেরা রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ সালে কর কর্তন, ২০২১ সালে রাসায়নিক সারের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসব কারণে কৃষি খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। পর্যটন খাতও ক্ষতির মুখে পড়েছে। সব মিলে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।