জান্তাবিরোধী ট্যাটুতে মিয়ানমারে প্রতিবাদ
মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী চলমান বিক্ষোভের এক মাস পেরিয়েছে। এর মধ্যে সেনা–পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৬০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী। আটকের সংখ্যা ১ হাজার ৮০০। এরপরও বিক্ষোভ দমেনি। বরং বিক্ষোভ মিছিলে জমায়েত বেড়েছে। নানা সৃজনশীল উপায়ে বিক্ষোভ চলছে মিয়ানমারে। রাজপথে বনেটখোলা গাড়ি আড়াআড়িভাবে রেখে জান্তার পথ রোধের চেষ্টা হয়েছে। নারীরা নিজেদের পরনের লুঙ্গি–পায়জামা রশিতে বেঁধে সাঁজোয়া যানের পথ আটকানোর চেষ্টা করেছেন। এবার মিয়ানমারের তরুণেরা বিক্ষোভের অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন জান্তাবিরোধী ট্যাটু। খবর সিএনএনের।
মূলত ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বড় শহর ও পর্যটন এলাকায় তরুণেরা নিজেদের শরীরে জান্তাবিরোধী ট্যাটু আঁকছেন। গণতন্ত্রের পক্ষে নানা বার্তা লেখা এসব ট্যাটুর বেশির ভাগই স্থায়ী।
স্থানীয় ইনথা জাতিগোষ্ঠীর একটি যুব সংগঠন বিক্ষোভকারীদের শরীরে জান্তাবিরোধী ট্যাটু এঁকে দেওয়ার কর্মসূচি দিয়েছিল। এতে অভাবনীয় সাড়া মিলেছে। আটজন শিল্পী বিক্ষোভকারীদের শরীরে ট্যাটু এঁকেছেন। প্রতিটি ট্যাটুর জন্য ২ ডলার পারিশ্রমিক ধরা হয়। এ অর্থ বিক্ষোভের কাজেই ব্যয় করা হবে।
তরুণ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চির মুখাবয়ব ট্যাটু করার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। এ ছাড়া জান্তা সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক তিন আঙুলের স্যালুট, আন্দোলনের স্লোগানসহ নানা বিষয় তাঁদের ট্যাটুতে উঠে এসেছে।
দেশটির নায়োং শোয়ে শহরের বাসিন্দা হুতুন হুতুন বলেন, ‘এসব ট্যাটুর স্মৃতি ও বার্তা জীবনভর থাকবে। আমাদের স্বপ্ন (গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা) সময়ের সঙ্গে অম্লান থাকবে। তাঁরা এসব স্থায়ী ট্যাটু মুছে ফেলতে পারবেন না। বরং এসব ট্যাটু বিক্ষোভকারীদের ঐক্যকে আরও মজবুত করবে।’
গত শুক্রবার নায়োং শোয়ে শহরে হুতুন হুতুনসহ আরও অন্তত ৭০ জন জান্তাবিরোধী ‘ট্যাটু বিক্ষোভে’ অংশ নেন। তাঁরা সবাই নিজেদের শরীরে গণতন্ত্রের পক্ষে বার্তাসংবলিত স্থায়ী ট্যাটু করিয়েছেন।
ট্যাটু বিক্ষোভে অংশ নেন ২৬ বছর বয়সী মোহ মোহ নামের এক নারী। তিনি বলেন, ‘আমিও একটি ট্যাটু করিয়েছি। কারণ, আমি সু চিকে ভালোবাসি। জান্তা সরকারের হাতে যেসব মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আমি তাঁদেরও ভালোবাসি। ট্যাটু করাটা খুবই কষ্টের। তবে সেই ব্যথার কাছে জান্তার নির্যাতনের কষ্ট কিছুই নয়। আমি আমাদের স্বাধিকার ফেরত চাই।’
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব জান্তা সরকারের
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত খায়ও জোয়ার মিনকে নিজ দেশে তলব করেছে জান্তা সরকার। বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ও বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনা–পুলিশের নির্বিচার গুলি চালিয়ে হত্যার নীতির তীব্র প্রতিবাদ করেন। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি অং সান সু চিসহ রাজবন্দীদের মুক্তি দাবি করেন।
খায়ও জোয়ার মিন একসময় নিজেও সেনাবাহিনীর কর্নেল ছিলেন। স্টেট কাউন্সেলর থাকার সময় সু চি তাঁকে লন্ডনে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দেন। সাক্ষাৎকারে এ কূটনীতিক বলেন, ‘মিয়ানমারের নাগরিকদের এভাবে মরতে দেখতে চাই না। আমি বিবদমান দুই পক্ষকে (জান্তা ও বিক্ষোভকারী) রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। দেশ এরই মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। আমি শান্তি চাই।’
তাঁর এ অবস্থান রাষ্ট্রবিরোধী কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘সু চি আমাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। আমি তাঁর নির্দেশ মানব। তাই আমার এসব মন্তব্য রাষ্ট্রবিরোধী নয়।’
সাক্ষাৎকার প্রচারের পরই জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে দেশে তলব করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে মিয়ানমার দূতাবাস থেকেও এক বিবৃতিতে সেনা অভ্যুত্থান ও নির্বিচার গুলি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের হত্যার সমালোচনা করা হয়েছে।