ইউক্রেনে হামলা চালানো অব্যাহত রাখায় কঠোর ভাষায় রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে যৌথ ঘোষণা দিয়েছেন জি-৭–এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। একই সঙ্গে শক্তি প্রয়োগের ভয় দেখানো থেকে বিরত থেকে জাতিসংঘের নীতি ও উদ্দেশ্য সমুন্নত রাখতে চীনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাপানের কারুইজাওয়া শহরে তিন দিনের বৈঠকের শেষ দিন আজ মঙ্গলবার সাতটি শিল্পোন্নত দেশের জোট জি-৭–এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ যৌথ ঘোষণা দেন। এই সাত দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা ও ইতালি।
যৌথ ঘোষণায় তাইওয়ান প্রণালি বরাবর দেখা দেওয়া উত্তেজনার গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এক চীন নীতি ও তাইওয়ান প্রশ্নে জি-৭–এর মৌলিক অবস্থানের কোনো রদবদল হয়নি। পাশাপাশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ অব্যাহত রাখার জন্য উত্তর কোরিয়ার নিন্দা, শিনজিয়াং ও তিব্বতে মানবাধিকার লঙ্ঘন চলতে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে হংকংয়ে চীনের গণতন্ত্র সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
তবে ঘোষণার প্রধান দিকটি অবশ্যই ছিল রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা। বলা হয়, পারমাণবিক অস্ত্র রাশিয়ার দায়িত্বজ্ঞানহীন বাগাড়ম্বর এবং বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের হুমকি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা জোরদার এবং নিষেধাজ্ঞার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখতে জি-৭ বদ্ধপরিকর। রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধ ও বেসামরিক জনগণ ও অবকাঠামোর ওপর চালানো হামলা ও অন্যান্য বিধ্বংসী তৎপরতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অবশ্য নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনে চালানো হামলার বিষয়ে নীরব থেকেছেন এবং খাদ্যসামগ্রীর চালান ও জ্বালানির ঘাটতির কারণে বিশ্বজুড়ে দেখা দেওয়া অস্থিরতার দায়ভার পুরোটাই রাশিয়ার ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। একইভাবে রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকার জন্য অন্যান্য দেশকে সতর্ক করে দিলেও নিজেদের অস্ত্রের চালান সমানে ইউক্রেনে সরবরাহ করে যাওয়ার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ অব্যাহত রাখা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। বরং অস্ত্রের সরবরাহ সেখানে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে খোলামেলা সাফাই গেয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন।
যৌথ ঘোষণায় অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিষয়ের মধ্যে মিয়ানমারে সামরিক জান্তার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার পদদলিত করা, আফগানিস্তানে তালেবানের প্রশাসনের মাধ্যমে মানবাধিকার সীমিত হয়ে আসা এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
মিয়ানমার প্রসঙ্গে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেয় জি-৭।
রাজনৈতিক বিষয়াবলির বাইরে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, আর্থিক অগ্রগতি ও অবকাঠামো উন্নয়ন, মহাকাশ ও সাইবার নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের অবক্ষয়, খাদ্যনিরাপত্তা, পুষ্টি, মানবিক সহায়তা, লিঙ্গসমতা এবং দুর্যোগঝুঁকি হ্রাস করা নিয়েও বেশ কিছু সুপারিশ ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রচারিত দীর্ঘ এ ঘোষণাকে মে মাসে নির্ধারিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে নেতাদের প্রচার করতে যাওয়া যৌথ বিবৃতির আগাম একটি সংস্করণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।